মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫

১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান বৈঠক

দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন মেরুকরণের আভাস

রানার প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২৬ জুন ২০২৫

দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন মেরুকরণের আভাস

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের অংশগ্রহণে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক। প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে তিন দেশ একটি সম্ভাব্য আঞ্চলিক জোট গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।


গত বৃহস্পতিবার চীনের কুনমিংয়ে ‘নবম চায়না–সাউথ এশিয়ান এক্সপো’ ও ‘ষষ্ঠ চায়না-সাউথ এশিয়া কো-অপারেশন ফোরাম’-এর সাইডলাইনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেন চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সান ওয়েইডং, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব রুহুল আলম সিদ্দিকী এবং পাকিস্তানের অতিরিক্ত পররাষ্ট্রসচিব ইমরান আহমেদ সিদ্দিকী। ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ।


যৌথ বিবৃতিতে তিন দেশ প্রতিবেশীসুলভ মনোভাব ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে জানায়, এই উদ্যোগ কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে নয়। অবকাঠামো, যোগাযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, স্বাস্থ্য, কৃষি, সমুদ্রনীতি, তথ্যপ্রযুক্তি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এ জন্য ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।


বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বৈঠক দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রতি এক ধরনের কৌশলগত বার্তা বহন করছে। চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘ভারতকে দেখানোর চেষ্টা থাকতে পারে যে আমরা একসঙ্গে কাজ করলে অনেক কিছু করা সম্ভব।’


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফজলুল হালিম রানা বলেন, ‘এই কাঠামো প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক হলেও দীর্ঘমেয়াদে তা কৌশলগত জোটে রূপ নিতে পারে।’ তিনি সতর্ক করেন, পশ্চিমা শক্তিগুলো এটি চীনের প্রভাব বিস্তারের অংশ হিসেবে দেখছে, যা দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতার পাশাপাশি নতুন ব্লক রাজনীতির ইঙ্গিত দেয়।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এহসানুল হক বলেন, ‘এই ধরনের উদ্যোগে যোগ দেওয়ার আগে বাংলাদেশকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে হবে। ভারতের দিক থেকে প্রতিক্রিয়া আসবে- এটা অপ্রত্যাশিত নয়।’
চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ চীন থেকে ৮.৮৯ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, রপ্তানি মাত্র ৪৬১ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, ভারত থেকে বাংলাদেশ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে।


পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য খুবই সীমিত ২০২৩ সালে তা ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও কম ছিল। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব বাড়ানোর সুযোগ আনতে পারে, তবে কৌশলগত ভারসাম্য ও প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের জটিলতা বিবেচনা করেই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

শীর্ষ সংবাদ: