মঙ্গলবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিউলি ঝরা ঋতুতে প্রতিমা গড়ায় ব্যস্ত শিল্পীরা

দিপংকর বর্মন  

প্রকাশিত: ১৬:০৪, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিউলি ঝরা ঋতুতে প্রতিমা গড়ায় ব্যস্ত শিল্পীরা

ভাদ্রের শেষে শরৎ শুভ্রতায় চারিদিকে শুধু সাজ সাজ রবে উৎসবের আমেজ। শরতের নীল-সাদা আকাশ, ভোরের আবছা কুয়াশা, শোভা পাচ্ছে কাঁশফুল আর বাতাসে শিউলি ফুলের ঘ্রাণ। প্রকৃতির এ শোভনীয় রূপের মোহনীয় মুহূর্তে জানান দিচ্ছে অশুভনাশিনী আনন্দময়ী দেবী দুর্গার আগমনি বার্তা। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার বাদ্যে শুরু হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। দেবীর আগমনকে ঘিরে তাই ব্যস্ত যশোরের প্রতিমা কারিগরেরা। প্রতিমা তৈরি দেখতে মন্দির ও মণ্ডপেও আসছে অনেকেই।

বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে নানা ধর্মীয় মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর মহালায়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের শুরু। এরপর ২৭ সেপ্টেম্বর মহাপঞ্চমী, ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে ষষ্টাদি কল্পারম্ভে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস, ওই দিন বিকেলে পূজারম্ভ। ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে মহাসপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে মহা অস্টমী; যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রমে কুমারীপূজা সকাল ১১টায়। ১ অক্টোবর সকালে মহানবমী পূজা কল্পারম্ভ  এবং ২ অক্টোবর সকালে মহাদশমী কল্পারম্ভ- পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন। 

এদিকে, শারদীয় এ উৎসবের জন্য দেবী প্রতিমা গড়তে এবছরও বেশ আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যশোরে এসেছেন কারিগরেরা। তাদের দাবি, গতবছরের তুলনায় এবছর কাজের চাপ বেশি। 

সরেজমিনে যশোরের বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে দেখা যায়, প্রতিমা তৈরিতে শিল্পীদের ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। নিপুণ হাতে তারা গড়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। বেশিরভাগ মন্দির-মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেছে, সেগুলো এখন শুকানোর জন্য রেখে দেওয়া হয়েছে। শুকিয়ে গেলে তাতে পড়বে রংতুলির আঁচড়। 

দুর্গাপূজার পর পরই অনুষ্ঠিত হবে লক্ষ্মী ও কালীপুজো। ফলে কয়েকটি মণ্ডপে দেবী দুর্গার প্রতিমার পাশাপাশি কালী, লক্ষ্মীর, বিশ্বকর্মার প্রতিমা-মূতি তৈরি করতে দেখা গেছে । 

যশোর বেজপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির সমিতি প্রাঙ্গণ থেকে প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিমা কিনে নিয়ে যান অনেকে। তাই অনেক আগে থেকেই এখানে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করা হয়। 
এদিকে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ শেষের পথে। 

যশোর বেজপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির সমিতি প্রাঙ্গণে ভাস্কর জয়দেব পাল বলেন, অনেক আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। খড় আর কাঁদা মাটি দিয়ে প্রতিমা নির্মাণের প্রাথমিক কাজও সম্পন্ন হয়েছে। দো-মটির পর এখন প্রতিমাতে দেয়া হবে রং তুলির আঁচড়। 

বড়বাজারের শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কারিগর গঙ্গা পাল বলেন, এবার লোকের  অভাবে কাজ কম করছি। ৯ টি প্রতিমা তৈরি করেছি, যার সবগুলোই বিক্রি হয়ে গেছে। আগামী 
এক সপ্তাহের মধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ হয়ে যাবে।

সেখানে দেখা যায় একজন নারী ভাস্কর প্রতিমা গহনা তৈরিতে ব্যস্ত আছেন। তিনি প্রতিমাকে সাজাতে বিভিন্ন ধরনের মাটির গহনা তৈরি করছেন সাচের মাধ্যমে। তিনি বলেন, প্রতিবছরই আমি এই মন্দিরে প্রতিমার তৈরির জন্য আমার স্বামীর সাথে আসি। তিনি প্রতিমা তৈরি করেন ,আর আমি মাটির অলংকার তৈরি করি।

সাতক্ষীরা থেকে আসা এখানকার প্রতিমা তৈরির একজন কারিগর বলেন, ‘এখানে আমরা ৪০টার মত প্রতিমা বানাচ্ছি। মাটির কাজ আর কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। শেষ হলে রঙের কাজ শুরু করবো। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষজন এসে আমাদের কাছ থেকে প্রতিমা কিনে নিয়ে যান। গতবছরের তুলনায় এবছর আমাদের কাজ একটু বেশি। গ্রাম অঞ্চলে এবার প্রতিমা বেশি পরিমাণে  তৈরি হওয়ায় শহরে কারিগর সংকট দেখা দিয়েছে। 

জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন বলেন, দুর্গাপূজার আয়োজনের বিশালত্তকে মাথায় রেখে আমাদের প্রতিটি ইউনিটের সবাই মিলিত হচ্ছি। প্রত্যেকটা মন্দিরে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষের সম্মিলনে নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হবে। ইতোমধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়াও সেনবাহিনীর কর্মকর্তারা আমাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ফোন করে বিভিন্ন তথ্য নিচ্ছেন। 
 

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: