বৃহস্পতিবার ২১ আগস্ট ২০২৫

৫ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১০ দিনে পেঁয়াজের মণে হাজার টাকা বৃদ্ধি

সংবাদদাতা, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ১৯:৩৯, ৭ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ১৯:৪২, ৭ আগস্ট ২০২৫

১০ দিনে পেঁয়াজের মণে হাজার টাকা বৃদ্ধি

ফরিদপুরে মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি এক হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফলে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়াই এই মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।

পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা ফরিদপুর। এখানকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শাহেদুজ্জামান জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে, যা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় ছয় লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন। তবুও মৌসুমে কৃষকরা পেয়েছেন মাত্র এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে, যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম। কৃষকরা মনে করেন, মণপ্রতি দুই হাজার থেকে দুই ২০০ টাকা পেলেই তারা লাভবান হতেন।

বর্তমানে ফরিদপুরের চাষিরা পাট জাগ দেওয়া, ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফলে পেঁয়াজ বাজারে আনা কমিয়ে দিয়েছেন তারা। এই কারণেই সরবরাহ কমেছে এবং মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে বলে জানান স্থানীয় আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা।

বোয়ালমারীর পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘চাষিরা পেঁয়াজ তুলেও বাজারে আনছেন না। এখন পাইকারি বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা দরে।’

সালথার সাইফুর রহমান ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘মৌসুমে কৃষকরা দাম পায়নি, এখন বড় চাষিদের কিছু পেঁয়াজ থাকলেও ছোটদের হাতে কিছু নেই। যা আছে তা আড়তদারদের কাছে। এখন দাম বেড়ে গেছে, লাভ করছে তারাই।’
কানাইপুরের ব্যবসায়ী তপন কুমার বলেন, ‘বর্তমানে ভারতের বা অন্য কোনও দেশের পেঁয়াজের আমদানি নেই। দেশীয় সরবরাহও কম। ফলে চাহিদার তুলনায় পণ্য কম, এতে করে দাম বেড়েই চলেছে।’

ফরিদপুরের কানাইপুর, সালথা, বোয়ালমারী ও নগরকান্দার বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭৫ টাকা কেজিতে। এতে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। ফরিদপুর শহরের চকবাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা গৃহিণী সাইদা আক্তার বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত, প্রতিদিন বাজার করতে হয়। হঠাৎ কেন এত দাম হলো, প্রশাসনের তা খতিয়ে দেখা উচিত।’

চাকরিজীবী রহমত উল্লাহ বলেন, ‘মাস শেষের দিকে এসে যখন বাজেট টান পড়ে, তখনই দাম বেড়ে যায়। সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।’

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সোহরাব হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদফতরের যৌথ ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত বাজার মনিটরিং চলছে। যদি কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করে, পেঁয়াজ মজুত করে দাম বাড়ায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, একদিকে মৌসুমে কৃষকের উৎপাদন খরচের নিচে দাম পাওয়া, আর অন্যদিকে সরবরাহ সংকটের সময় পাইকারি দরে দ্বিগুণ লাভÑ এই বৈষম্যই দেশের কৃষি বিপণন ব্যবস্থার বড় চ্যালেঞ্জ। এ ব্যবস্থায় সময়মতো সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
 

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: