শুক্রবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫

১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঘর-বারান্দা ও সিঁড়ির পাশেও বই-পত্রিকা

বিচিত্র-রকমারি হাজার হাজার বইয়ের বসতি ইবির অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদের ‘বইবাড়ি’

রানার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ২৯ নভেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৫:১৬, ২৯ নভেম্বর ২০২৫

বিচিত্র-রকমারি হাজার হাজার বইয়ের বসতি  ইবির অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদের ‘বইবাড়ি’

বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে বই। নিচতলার ড্রয়িংরুম থেকে শুরু হয়েছে বইয়ের রাজত্ব। ওপরের তলায় ওঠার সিঁড়ির পাশেও থরে থরে পত্রিকা ও ম্যাগাজিন সাজানো। প্রতিটি ঘরে ঘরে বই- বৈঠকখানা, শোবার ঘর, এমনকি বাড়ির বারান্দাও বাদ যায়নি। সেখানেও শেলফ ভর্তি বই। আর তৃতীয় তলার একটি কক্ষ জুড়ে বই আর বই। ঘরটিতে কয়েকটি বুকশেলফের পাশাপাশি একটি খাট ও র‌্যাকের ওপর রাশি রাশি বইপুস্তক ভর্তি। 

গত চল্লিশ বছর ধরে প্রায় ২০ হাজারের কাছাকাছি বই-সাহিত্য পত্রিকা ও ম্যাগাজিন গৃহটিতে প্রবেশ করেছে- বলছিলেন, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ শাহিন।

‘বই বাড়ির’ কথা প্রথম যখন শুনি তখন ‘কভিডকাল’। বিশুদ্ধ জ্ঞানী ও সিরিয়াস পাঠক খ্যাত শ্রদ্ধাভাজন গাজী ফরিদ আহমেদ একদিন অধ্যাপক শাহিনের বইপুস্তকের বিরাট সংগ্রহের কথা বলেন। স্টেডিয়াম গ্যালারি মার্কেটে বই বিপণন প্রতিষ্ঠানে তাঁর স্ব^ভাবসুলভ ‘চিরাচরিত’ জ্ঞানালাপের মাঝে তিনি বই বাড়ির সন্ধান দেন। বলেন-অধ্যাপক শাহিনের বাড়ির নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত বই ও বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা আছে; সংখ্যায় সেটি ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। অবশ্য; গাজী ফরিদের বাসস্থানটিও আরেকটি বই বাড়ি। ওনার সংগ্রহেও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ৮ থেকে ১০ হাজারেরও পর বই আছে।

বারান্দি পাড়ার ঢাকা রোডে তেতলা সেই বাড়িটি; যেখানে বইয়ের অগাধ সমুদ্রে ডুবুরির মত ডুব দিয়ে জ্ঞান রাজ্যের অতলে তলিয়ে যেতে চাইবেন যেকোন বইপ্রেমী। এই বই বাড়িতে যেদিন আমরা প্রথম পা রাখি, সেদিন ছিল শুক্রবার। এদিন সকালে শহরের ঈদগাহ্ মোড়ে যখন পৌঁছাই শ্রাবণের আকাশ তখন রোদঝলমলে। সাদামেঘ ভাঙা রোদ্দুর গলছে জমিনজুড়ে। মোড়টিতে অপেক্ষায় ছিল অনুজ সাংবাদিক সহকর্মী রায়হান সিদ্দিক। ওর মোটরসাইকেল চড়ে রওয়ানা হলাম বই বাড়ি। যাচ্ছি আর মনের ক্যানভাসে কল্পনার রঙে ছবি আঁকছি, খুব দারুণ একটা ফিচার আইটেম হবে। সংবাদকর্মী হিসেবে ভেতরে ভেতের উত্তেজনা ছড়াচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে প্রতি মুহূর্তে। এমন ভাবনার ঘোরে কখন ঢাকা রোড পৌঁছে যাই টেরই পাইনি। সম্বিৎ ফিরে পাই রায়হানের কথায়। এরপর একটি লন্ড্রিতে বাড়িটির কথা বলতেই স্থানীয় একজন সঙ্গে করে নিয়ে চিনিয়ে দিলেন। প্রাচীর ঘেরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে মোবাইলে রিং করতেই বেরিয়ে এলেন অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ শাহীন। স্বভাসুলভ হাসিমুখে গ্রিলের গেট খুলে ভেতরে নিয়ে গেলেন।

ভেতরে গিয়ে বসলাম নিচতলার বৈঠকখানায়। ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা প্রায় এগারটা। এরই মধ্যে গাজী ফরিদের চলে আসার কথা। তিনি আসলে সবাই মিলে ঘুরে ঘুরে বই দেখব। শাহিন ভাই ভেতরে গিয়ে চা, বিস্কুট, কলা ও মিষ্টি এনে খেতে দিয়ে বললেন- নাশতা ও  চা পান করতে করতে ফরিদ ভাই চলে আসবেন। তারপর ওপরে নিয়ে গিয়ে বই দেখাব। কিন্তু এরই মধ্যে উৎসুক চোখ ঘরের একোণ ওকোণে ঢু মারছে। আর ঠিক জায়গা মত চোখও আটকে গেছেÑ আর সেটি হলো এ ঘরের একটা টেবিলের নিচের তাকের ওপর একগাদা ম্যাগাজিন সাজানো। এদিকে, গাজী ফরিদের দেরি হওয়ায় আমাদের নিয়ে ওপরে বইয়ের রাজ্যে চললেন অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ।

সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময় দেখি সিঁড়ির নিচে একটা র‌্যাকে বেশ কিছু বইপত্র। সিঁড়ির পাশেও ম্যাগাজিন ও পত্রিকা। তৃতীয় তলার কামরাটি ঘুরে দেখা গেল, দুর্লভ সব বইপত্রের সংগ্রহ। একটি তাকে চোখে পড়ল মহোমহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর পাঁচখন্ড রচনাবলী। এই ঘরটির বেশির ভাগ বইই মূলত রচানাবলীর সংগ্রহ। বাংলা সাহিত্যের খাতিম্যান ও যশশ্বী সব লেখকদের করোরই রচনাবলী যেন বাদ পড়েনি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, জরাসন্ধ, সৈয়দ মুজতবা আলী, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, সৈয়দ আবুল মুনসুরসহ কার রচনাবলী যে নেই সেটিই যেন একটি প্রশ্ন। অন্যান্য আরো অনেক বইপত্রের সাথে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত সাহিত্যপত্রিকাগুলো। আরো রয়েছে দৈনিক পত্রিকার ঈদ সাময়িকী ও বিশেষ-সংখ্যা।
বই বাড়িতে চুরি
তিন তলার এই কক্ষটিতে একবার চোরের হাত পড়ে। রাতে চোরেরা হানা দিয়ে বই ও বহুসংখ্যক পত্রিকা নিয়ে যায়। বাড়ির পেছনে প্রাচীর ঘেরা গাছগাছালির ছায়াভরা অনেকখানি ফাঁকা জায়গা। এই পেছন পাশ দিয়ে পয়োনিষ্কায়নের পাইপ বেয়ে ওপরে ওঠে চোর। তখন তিনতলার এই ঘরটির জানালায় গ্রিল ছিল না। যার কারণে গ্লাস ভেঙে সহজেই ভেতরে ঢুকে বই চুরি করে নিয়ে যায়। তবে বইয়ের তুলনায় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনই বেশি চুরি হয়েছিল। দৈনিক, ভোরের কাগজসহ বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার ২৫-৩০ বছর আগের সাহিত্যপত্রিকা চোর নিয়ে যায়। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে জানুয়ারিতে এই চুরিটি হয়। 

এরপর দোতলায় নামি। এই ফ্লোরের প্রথমে একটি করিডোর। তারপর একটির গা-লাগোয় আরেকটি এরকম তিনটি কামরা। করিডোরটির বিরাট এক বুকশেলফে রকমারি বইয়ে ভরপুর। একটিতে রয়েছে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওপর প্রচুর বই। অধ্যাপক মাহাবুব মুর্শিদের সহধর্মীণি পেশায় তিনিও শিক্ষক। যশোর সরকারি মাইকেল মধূসূদন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগে অধ্যাপনা করেন, আমার সরাসরি শিক্ষক। আমি তারই ডিপার্টমেন্টে পড়তাম। করিডোরের বুক শেলফটি একটু ভিন্ন ধরণের, যেটি সচরাচর দেখা যায় না। সাধারণ বুকশেলফে একটি তাকে এক সারি বই রাখা যায়। কিন্তু এটি তৈরিই করা হয়েছে একদম ভিন্ন রকমভাবে। তাকগুলো পেছনের দিকে সম্প্রসারিত; আর পেছনের অংশটুকু সামনের থেকে বেশ উঁচু। এতে সামনের এক সারি বইয়ের পেছনে আরেক সারি বই রাখা যায় এবং পেছন দিকটা উঁচু হওয়ায় সেখানে রাখা বইয়ের নামের একটা অংশ দেখা যায় বলে খুঁজে পেতেও সমস্যা হয় না। এই তলার একটি কক্ষ অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ’র স্টাডিরুম। ঘরটির দেয়ালে বিশালাকারের একটি ওয়াল বুকশেলফ। সেটি জুড়ে সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাসসহ জ্ঞান জগতের বহুমাত্রিক সব বই। তার পাশের একটি শোবার ঘরেও বুক শেলফে হরেক রকমের বই। কামরাটির পাশের বেলকনিতেও বুকশেলফ ভর্তি করা বই। এর পাশের ঘরটিতে ঢু মেরে দেখি বই আর বই। একটি রিডিং টেবিলে একটি কঙ্কাল বক্সে ভরে রাখা। সেটির চোখহীন কোটর যেন বুকে হিম ধরিয়ে দেয়। অধ্যাপক সাহেবের ছেলে; সন্তান দুটির মধ্যে ছোটটি বরিশাল মেডিকেলে পড়ে। আর মেয়েটি বড়, বিয়ে হয়ে গেছে । এই ঘরটির শেলফ জুড়ে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন মাধ্যমÑগল্প, কবিতা, উপন্যাস ও প্রবন্ধসহ হরেক রকমমের বই নজরে পড়ল। শেলফ ছাড়াও কাঠের তৈরি নান্দনিক শৈলির একটি স্ট্যান্ডেও জ্ঞানমূলক বিভিন্ন বইসংগ্রহ।

বই বাড়ি ঘুরে ফিরে দোতলার করিডোরে বসে গাজী ফরিদ আহমেদ, আমি ও রায়হান সিদ্দিক আর অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ শাহীন চা চক্রে বসি। আলাপচারিতায় অধ্যাপক মাহবুব মুর্শিদ’র কাছে তখন তার গ্রন্থশালাটি গড়ে তোলার ঠিকুজি সন্ধান করি।
তিনি জানান, বাবা-মা দু’জেনই শিক্ষক ছিলেন-তাদের কাছ থেকেই মূলত বইয়ের প্রতি এই ঝোঁক সৃষ্টি। বাড়িতে তখনও অনেক বই ছিল। মা খুব বই পড়তেন। এক মামা ছিলেন, নিরাপত্তার কারণে তার ভারতের বাড়ি থেকে তিনি অনেক বই ও পত্রিকা এনে এই বাড়িতে রাখেন। তিনি বলেন, মামার সেসব বইপত্রিকার মধ্যে সওগাত, মোহাম্মদীসহ সেই সময়কার জনপ্রিয় অনেক পত্রিকা ছিল। মামার সেসব বই ও পত্রিকার অনেকগুলো তখন পড়া হয়ে যায়, সেটিও বইয়ের প্রতি আগ্রহের জন্ম দেয়। পাঠ্যবইয়ের বইয়ের বাইরের অন্য বইকে তখন ‘আউট বুক’ বলত-সে’সময়েই গল্প-উপন্যাস ও কবিতার মতন আউট বইয়ের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হয়। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে বই কিনতে কিনতে গড়ে ওঠে এই সংগ্রহটি।
তিনি বলেন, আশির দশকে জাহাঙ্গীর নগর বিশবিদ্যালয়ে পড়াকালীন নীলক্ষেত থেকে বই কিনতাম। পুরানা পল্টনে কমিউনিস্ট পার্টির অফিসের ওই দিকটাতেও বইয়ের দোকান ছিল তখন। সেখান থেকে নিয়মিতই বই কেনা হতো। বিশেষ করে রাশিয়ান বইগুলো খুবই কম দামে পাওয়া যেত, দুই টাকা পাঁচ টাকা একেটি বইয়ের দাম পড়তো। অসাধারণ সব অনুবাদের বই এতো কম দামে আমরা কিনতে পারতাম। নব্বইয়ের দশকে স্টেডিয়াম মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় সেসময় একটা দুর্দান্ত বইয়ের দোকান ছিল; বর্তমান প্রজন্ম হয়তো সেটি জানেনা এখন সেই দোকানটির নাম ছিল ম্যারিয়েটা ঢাকা শহরের সেরা বইয়ের দোকান। সবচেয়ে ভালো ভালো বই সেখানে পেতাম। এরপর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে বইয়ের দোকান গড়ে উঠল। সেখান থেকেও অনেক বই কিনেছি।

মাহাবুব মুর্শিদ জানান, আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে তার বই সংগ্রহের যাত্রা শুরু। কান্টনমেন্ট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার সময় খবরের কাগজের ঈদ সংখ্যা, সাহিত্য পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনসহ যেগুলোর রুচির সঙ্গে যায়, কেনা শুরু করেন।

তিনি বলেন, এরপর জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙলা ভাষা সাহিত্যে অনার্স পড়ার সময় গল্প, উপন্যাস ও তার সমালোচনামূলক বইগুলো কিনতে থাকি। এরপর ধীরে ধীরে বিচিত্র রকমের বই সংগ্রহে আগ্রহ গড়ে ওঠে। সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজে শিক্ষকতা শুরুর পর ফরিদ ভাই ও পাভেল ভাইদের সাথে আড্ডা আমাকে বইয়ের ব্যাপারে বহুগামী ও বিচিত্রগামী করে তোলে। তখন মনে হলো সাহিত্য কোন ‘অ্যাবসলুট’ বিষয় না। তারপর থেকে দর্শন, রাজনীতি, সমাজতত্ত্বসহ নানা রকম তাত্ত্বিক বইপত্র কেনা আরম্ভ করি। তিনি বলেন, কোন বিষয় না জেনে আমি কখনো ক্লাসে পড়াই না। যার কারণে আরো অনেক বই কিনতে থাকি, আর এভাবেই সংগ্রহ বেড়ে যায়।

তিনি জানান, বাঙলা একাডেমির যত রচনাবলী আছে; তার সবটাই কেনার চেষ্টা করেছেন। যেমন-ডক্টর মোহাম্মদ শহিদুল্লার রচনাবলী, এনামুল হকের রচনাবলী, কাজী আব্দুল ওদুদ ও মোহাম্মদ বরকতুল্লাহ’র রচনাবলীর মত যত পুরাতন রচনাবলী রয়েছেÑ তার সবটার সংগ্রহ রয়েছে তার কাছে। রবীন্দ্র রচনাবলীর একাধিক সেট তার সংগ্রহে আছে। নজরুল রচনাবলীসহ মানিক, বিভূতি ও তারাশঙ্করের রচনাবলী ছাড়াও যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এখনো সেগুলো কেনেন। এছাড়াও বাংলাভাষাভাষী কবিদের মধ্যে যাদের পঞ্চপান্ডব বলা হয়Ñজীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণুদে ও অমিয় চক্রবর্তীর রচনাবলীও রয়েছে। জীবনানন্দের ওপর সত্তর আশিটি রেফারেন্স বই রয়েছে। এরপর মার্কসীয় সাহিত্যের প্রতি ঝোঁকার পর সাবলটার্ন স্টাডিজের ওপর গ্রামসিসহ অন্যদের যেসব লিটারেচার বের হলো সেগুলো কিনতে লাগলেন। ধাপে ধাপে ইতিহাস, নৃতত্ত্ব ও জ্ঞানের বিচিত্র সব শাখার বইয়ের ব্যাপারে ঝোঁক তৈরি হয়, আর সেই মাফিক বইও বাড়িতে আসতে থাকে। চল্লিশ বছর ধরে এভাবে একের পর এক বই আসছে।

তিনি আরো জানান, সংগ্রহের ৫০ শতাংশই পত্রিকা। এসব পত্রিকার ভেতর আছে একাডেমিক ও নন একাডেমিক পত্রিকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য পত্রিকা অধিকাংশই তার কাছে আছে। নীলক্ষেত ঘেটে সেগুলো সংগ্রহ করা। বাংলা একাডেমি থেকে বহুকাল আগে প্রকাশিত পত্রিকারও কালেকশন আছে। তবে এসব পত্রিকার অনেক পোকায় কেটে ফেলেছে। এছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বাংলা একাডেমি, রবীন্দ্রভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব জার্নাল বের হয় তার অধিকাংশই কালেশনে আছে। নন একাডেমিক যেসব পত্রিকা বিশেষ করে লিটল ম্যাগাজিন সেগুলোও সংগ্রহ করতে থাকেন। লোক, কোরক, নিরন্তর, অনিক, এবং মুশায়েরা-এরকম দারুণ সব লিটল ম্যাগ সংগ্রহ কখনো ‘মিস’ করেননি।

তিনি বলেন, অনেক বই হয়তো আবারো পুর্নমুদ্রণ হবে। কিন্তু লিটল ম্যাগাজিন ও সাহিত্যপত্রিকা পুর্নমুদ্রনের সম্ভাবনা নাই। যার কারণে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে এগুলো সংগ্রহ করেছি।

বই আড্ডা: বইচর্চায় শেষ হয়নি পিএইচডি

২০০০ সালের দিকে রবীন্দ্র গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেনের তত্ত্বাবধায়নে পিএইচডি শুরু করেন মাহবুব মুর্শিদ। পিএইচডিতে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছোট গল্প। এ কাজে তিনি অনেক দূর অগ্রসরও হয়েছিলেন। এই গবেষণার কাজে ভারতে গিয়েছিলেন; সেখানে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ে অগ্রন্থিত রচনাবলীর সন্ধান পান; সেখানকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি ও লিটল ম্যাগ গবেষণা কেন্দ্রে। সেসব অগ্রন্থিত রচনা সংগ্রহও করেন।

তিনি জানান, সমকালীন সমাজ, দর্শন, ইতিহাস, রাজনীতি ও পঠিত বইপত্র নিয়ে সেসময় খুব বেশি আড্ডা চলতো। লেখক ও গবেষক পাভেল চৌধুরী, বেনজিন খান, গাজী ফরিদ আহমেদ ও মেহদি উর রহমান টুটুলসহ আরো অনেকে সেই আড্ডায় জড়ো হতেন। এই আড্ডাটাই সেসময় বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন; এমনকি মনে করতেন পিএইডি করাটা তত বেশি গুরুত্বপূর্ণ না।

তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্তটা ঠিক বলব না। কারণ, একটা একাডেমিতে আছি, একাডেমিয়ার যে নিয়ম, সেই নিয়ামানুযায়ী পিএইডি না করলে পিছিয়ে যেতে হয়। প্রফেসর হওয়ার ক্ষেত্রে পিএইচডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমার জীবনের প্যাটার্নটা ছিল অন্যরকমÑএই একটু আলস্যভরা, আড্ডা প্রিয়তা, বই কেনা, বই ঘাটাÑএইসব। খুব সিস্টেমেটিক কোন ব্যাপারে বা বস্তুগত যেটা করলে প্রমোশন হবে; সেসব ব্যাপারে এক রকম প্রায় অনীহাই ছিল। ফলে গবেষণার কাজটা শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠেনি, যদিও প্রায় সম্পন্ন করেই ফেলেছিলাম।
 

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: