বুধবার ১৫ অক্টোবর ২০২৫

২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেন এক শিক্ষক খালিয়া পাবলিক লাইব্রেরি

মাসুম বিল্লাহ, শালিখা (মাগুরা) 

প্রকাশিত: ১৭:২৭, ৬ অক্টোবর ২০২৫

যেন এক শিক্ষক খালিয়া পাবলিক লাইব্রেরি

সবুজ ধানক্ষেত বেষ্টিত নিভৃত একটি গ্রাম খালিয়ার এককোণে জ্ঞানের ছোট্ট একটি বাতিঘর খালিয়া পাবলিক লাইব্রেরি ও কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। পাঠকদের দেওয়া সামান্য আর্থিক সহায়তায় কোনোরকমে টিকে থাকা এই লাইব্রেরিটি এখন পরিণত হয়েছে গ্রামীণ শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে। 

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিন প্রায় ডজনখানেক পাঠক আসেন এখানে। কেউ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন। আবার কেউ আসেন চাকরির তথ্য জানতে। কেউ কেউ আবার আসেন মনকে হালকা করে মানসিক প্রশান্তির জন্য। 
১৯ বছর বয়সী আয়েশা বেগম চাকরির চেষ্টা করছেন। আলাপচারিতায় তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, লাইব্রেরিটা আমাদের জন্য জানালার মতো। এটা না থাকলে আমরা কিছুই শিখতে পারতাম না।
২০২০ সালে স্থানীয় কিছু বইপ্রেমীর হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় এই গ্রন্থাগারের। বর্তমানে এখানে প্রায় ২ হাজার বই ও ম্যাগাজিন রয়েছে রয়েছে এখানে। গল্প, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিশুতোষ সাহিত্য থেকে শুরু করে সমকালীন নানা বিষয়ের বইয়ে সংগ্রহ আছে। অধিকাংশ বই এসেছে সরকারের সহায়তা কিংবা স্থানীয় দাতাদের অনুদানে।

লাইব্রেরিটি আশপাশে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চবিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা রয়েছে। লাইব্রেরিটি শুধু বই পড়ার জায়গা নয়; বরং একটি ‘কমিউনিটি হাব’।  যেখানে চলে পাঠচর্চা, কর্মদক্ষতা ও চাকরির প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
গ্রন্থাগারটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল বুক সেন্টার-এ নিবন্ধিত। মাঝে মাঝে সরকার থেকে বই, অল্প কিছু আর্থিক অনুদান বা উপকরণ পাওয়া যায়। তবুও অর্থের সংকট এই উদ্যোগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
স্বেচ্ছাসেবী লাইব্রেরিয়ান হাসানুর রহমান জানান, গত মাসে প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল লাইব্রেরি। বিল পরিশোধের টাকা ছিল না। দর্শনার্থীদের দানেই কোনোভাবে টিকে আছে পাঠাগারটি। প্রতিদিনই সংগ্রাম।

তবুও খালিয়া লাইব্রেরি বেঁচে আছে এক অনন্য আশাবাদের গল্প নিয়ে। সন্ধ্যা নামলে যখন ছোট্ট ঘরের একমাত্র বাতিটি জ্বলে ওঠে। কয়েকজন পাঠক নীরবে বসে বইয়ের পাতায় ডুবে যায় যেন অন্ধকারের ভেতরে আলোর খোঁজ।
কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলে, যেখানে অনেক তরুণ শহরে চলে যায় কাজের খোঁজে, সেখানে এই গ্রন্থাগার শুধু বই নয় আশা, স্বপ্ন ও জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছে।

লাইব্রেরি কমিটির সাধারণ সম্পাদক খিজির হায়াত বলেন আমরা চাই, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক। গ্রামীণ লাইব্রেরিতে বিনিয়োগ মানে হচ্ছে আলোকিত বাংলাদেশ গড়া।
উপজেলার ছোট্ট নগরীতে গঠে ওঠা এই ছোট্ট লাইব্রেরি যেন প্রমাণ করেছে স্বপ্ন থাকলে সীমাবদ্ধতাও শক্তি হয়ে ওঠে।
 

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: