মঙ্গলবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

৩১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে সফল উদ্যোক্তা ইসলাম রহমান

মাসুম বিল্লাহ, শালিখা (মাগুরা) 

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে সফল উদ্যোক্তা ইসলাম রহমান

ছোট বেলায় একটি চুল্লির আগুনের মধ্যে পড়ে- দুটি পা পুড়ে যায় ইসলাম রহমানের। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখিয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেও দুটি পা স্বাভাবিক হয়নি। শারিরীকি এমন সমস্যার মধ্যেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন তিনি। বন বিভাগ ও রেল মন্ত্রণালয়ে চাকরির জন্য লিখিত পরীক্ষায় টিকলেও পর পর দুটি ভাইভা-তে বাদ পড়েন। পরে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হন ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে। সেখানে অধ্যয়নকালে বিসমিল্লাহ এগ্রো নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ঘুরতে গিয়ে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হন।

এরপর পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে চলে আসেন নিজ এলাকায়। এসে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৬ লাল টাকা ঋণ নিয়ে মাছ চাষাবাদে ঝুঁকে পড়েন। প্রথমে উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের জুনারী গ্রামের মরা বিলে ২ একর জায়গা লিজ নিয়ে শুরু করেন তেলাপিয়া মনোসেক্সের পোনা চাষ। যেখান থেকে মাত্র চার মাসে লাভ হয় ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তারপর আর পিছু তাকাতে হয়নি মাগুরার শালিখা উপজেলার তালখড়ি ইউনিয়নের উজগ্রামের আওয়াল শেখের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে ইসলাম রহমানকে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি এখন একজন সফল উদ্যোক্তা। মাসে তার আয় লক্ষাধিক টাকা। বর্তমানে তার ঘেরের সংখ্যা তিনটি। যেখানে ৪-৫ জন কর্মরত। তাদের প্রত্যেকের মাসিক বেতন ১০ হাজার টাকার ওপরে।  মাছ চাষের পাশাপাশি তার মুরগির খামারও রয়েছে কয়েকটি।

সরেজমিন শালিখা উপজেলার আড়পাড়া ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামে ইসলামের দুইটি ঘের ও একটি মুরগির খামার ঘুরে দেখা যায়,  পুকুরে রয়েছে- তেলাপিয়া, মিরর কার্প, সিলভার কার্প, গ্লাস কার্পসহ নানা প্রকারের দেশি-বিদেশি অনেক মাছ। সাথে খামারটি অসংখ্য কালার বার্ড মুরগিতে পরিপূর্ণ। পুরো শেড তদারকি করতে হিমশিম খেতে হয় ইসলাম রহমানসহ কর্মচারীদের। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন ইসলাম- যা দেখে গর্বিত এলাকাবাসী। 

স্থানীরা জানান, ইসলামের যখন পা পুড়ে যায় তখন সবাই ভেবেছিল- ইসলাম হয়তো পরনির্ভরশীল হয়ে জীবন পার করবে। এখন দেখি ইসলামের ওপরেই অনেকে নির্ভরশীল। এলাকার অসহায় অনেক মানুষ ইসলামের আর্থিক সহায়তা পেয়ে খুশি বলেও জানান তারা। 

এ বিষয়ে ইসলাম রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,  আজ আমার যে সফলতা তা একদিনে হয়নি। সফল হতে আমাকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তবে শুরু থেকেই আমি সফলতা পেয়েছি। সাথে পেয়েছি মানুষের দোয়া। ছোট বেলায় যখন আগুনে পা পুড়ে যায় তখন সবাই আমার পরিবারকে বলতো ছেলেটা বুঝি পরিবারের বোঝা হয়ে গেল। আমি মানুষের সেসব কথাগুলো কর্ণপাত না করে নিজ লক্ষ্যে অবিচল থেকে আজ সফল হয়েছি। এখন অনেক ভালো আছি। 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, ইসলাম একজন সফল উদ্যোক্তা। আমাদের অফিস থেকে মাঝে মাঝে তার খামারের খোঁজ খবর নেওয়া হয়। সামনে তাকে পুরস্কৃত করা হবে। ইসলামের মতো এরকম বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তাকে আমরা সর্বদায় সহায়তা করতে প্রস্তুত। পাশাপাশি বেকার যুবকদের অযথা বসে না থেকে উদ্যোক্তা হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
 

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: