
গতবছরের ১৭ জুলাই যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ছাত্রী হোস্টেলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেয় বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ। তৎকালীন ‘শেখ হাসিনা ছাত্রীনিবাসে’ প্রভাববিস্তারকারী ছাত্রলীগ নেত্রীসহ তাদের অনুসারীদের বাধার মুখে টানা পাঁচঘন্টা হলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন হল-নিবাসী শিক্ষার্থীরা সেদিন। ছাত্রলীগ নেত্রীদের শক্তি যোগাতে হলের সীমানা প্রাচীরের বাইরে অবস্থান নিয়েছিল ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। বাইরে থেকে তারা ছাত্রীদের উদ্দেশ্য করে গালাগালি ও হুমকি দিতে থাকে। এর একপর্যায়ে কলেজ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে হলে প্রবেশ করেন হল-নিবাসী ছাত্রীরা।
কলেজটির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সালেহা সুলতানা ঊষা বলেন, ওই ঘটনার পরদিন ১৮ জুলাই আমরা কলেজ অধ্যক্ষকে লিখিতভাবে জানাই যে- হোস্টেলের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের ছাত্র রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলের প্রভাব-প্রতিপত্তি চলুক, সেটা আমরা কেউ চাই না। কলেজ কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের এই দাবি না মানে; আর এরপর যদি আমাদের ওপর প্রাণনাশী কোনো হামলা হয়; তার জন্য দায়ী থাকবে কলেজ প্রশাসন। এরপর আমরা কলেজ হোস্টেলকে ছাত্র রাজনীতি মুক্ত ঘোষণা দিই। এখানো ছাত্রী হোস্টেলগুলো তখন থেকে ছাত্র রাজনীতি ও দলীয় প্রভাবমুক্ত রয়েছে।
ঊষা বলেন, ওই দিনের মতো ছাড়াও আরো অনেক বৈরী পরিবেশ, হুমকি-ধামকি উপক্ষো করে আমরা জুলাই আন্দোলনে শরিক হয়েছিলাম এবং শেষদিন পর্যন্ত আন্দোলনের মাঠে ছিলাম। এখনো মাঠ ছেড়ে যাইনি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বোও না।
জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণের নানা দিক নিয়ে আলাপচারিতায় ঊষা বলেন, প্রথমে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামলেও পরবর্তীতে আমাদের আকাঙ্খা আরো সম্প্রসারিত হয়। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্রে রূপান্তরের ভাবনা জাগ্রত হয় আমাদের ভেতর। ফ্যাসিবাদ নির্মূলের মাধ্যমে নতুন একটি গণতান্ত্রিক বাঙলাদেশ গঠনের স্বপ্নে লড়তে থাকি আমরা সবাই।
প্রচুর সংখ্যক নারী শিক্ষার্থী জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। নারীরা সেই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সন্ত্রাসীদের আক্রমণ থেকে রক্ষায় ছেলেদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে সবক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। এর পেছনের কারণ কী হতে পারে, এমন প্রশ্নে ঊষা বলেন, আসলে নারীরা ঢাল হিসেবে ঠিক নয়; ছেলেদের পাশপাশি থেকে আন্দোলনে সমানভাবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। এক্ষেত্রে হামলা-আক্রমণ ঠেকাতে একে অন্যকে রক্ষায় পরস্পর এগিয়ে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া মেয়েদের নিয়ে সমাজে নানাভাবে বহুধরনের সমালোচনা হয়েছে ও এখনো সেটি চলছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নারীদের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে। অব্যাহতভাবে নারীদের সাইবার বুলিংয়ের সম্মুখিন হতে হচ্ছে। আমার ধারনা এসব কারণে হয়তো জুলাইয়ের নারীরা মিটিং ও মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
জুলাই যোদ্ধা সালেহা সুলতানা ঊষা বলেন, শুধুমাত্র একটি ফ্যাসিস্ট রেজিমের চেঞ্জ না; রাষ্ট্র সংস্কারসহ আরো অনেক লক্ষ্য ছিল আমাদের। সেগুলো বাস্তবায়নে এখনো আমরা সক্রিয় আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।