বুধবার ১৫ অক্টোবর ২০২৫

২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধেও পোশাক রপ্তানিতে গতি

রানার প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ৯ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৪:৩৫, ৯ অক্টোবর ২০২৫

ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধেও পোশাক রপ্তানিতে গতি

ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠানোর (ট্রান্সশিপমেন্ট) সুবিধা বন্ধের ধাক্কা সামলে উঠেছে বাংলাদেশের পোশাক খাত। শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরকে বিকল্প রুট হিসেবে ব্যবহার এবং দেশের বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে ইউরোপে রপ্তানি কার্যক্রম এখন চলছে স্বচ্ছন্দে।

রপ্তানিকারকদের মতে, বছরের এপ্রিলে ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার পর তারা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছোট জাহাজে পণ্য পাঠাচ্ছেন কলম্বো বন্দরে। সেখান থেকে বড় জাহাজে (মাদার ভেসেল) সরাসরি ইউরোপের গন্তব্যে পৌঁছায় পোশাক। জরুরি চালানের ক্ষেত্রে কলম্বো থেকে দুবাই হয়ে আকাশপথেও পণ্য পাঠানো হচ্ছে।

সরকার এরই মধ্যে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন বিস্ফোরক শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (ইডিএস) স্থাপন করেছে। একই সঙ্গে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের চারটি ইডিএস মেশিন মেরামত করে সচল করা হয়েছে। দুই বিমানবন্দরেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং চার্জ কেজিপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় সেন্ট কমানো হয়েছে।

স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, ‘সিলেটে ইডিএস চালু হওয়ায় ঢাকার ওপর চাপ কমেছে। ইনডিটেক্সের মতো বড় ব্র্যান্ড এখন নিজস্ব চার্টার্ড বিমানে সিলেট বা ঢাকা থেকে পণ্য নিচ্ছে।

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক ফয়সাল সামাদ জানান, বর্তমানে আকাশপথে পণ্য পরিবহনের চাপ নেই।ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর পোশাক এখন কলম্বো হয়ে যাচ্ছে,’ বলেন তিনি।

আগে স্ক্রিনিং সুবিধার অভাব কার্গো বিমানে জায়গার স্বল্পতার কারণে রপ্তানিকারকেরা বেনাপোল দিয়ে ভারতীয় বিমানবন্দর হয়ে ইউরোপে পণ্য পাঠাতেন। বিজিএমইএর তথ্যমতে, বছরের প্রথম তিন মাসে ভারতীয় বিমানবন্দর দিয়ে ৪৬২ মিলিয়ন ডলারের ৩৫ হাজার টন পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। আগে বছরে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারত হয়ে যেত।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সাবেক সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, ‘ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের পর ঢাকা সিলেট দুই বিমানবন্দরেই স্ক্রিনিং সুবিধা উন্নত করা হয়েছে।

খরচের বিষয়ে তিনি জানান, সিলেট থেকে ইউরোপে পাঠাতে কেজিপ্রতি গড়ে .৮০ ডলার, যা ব্যস্ত মৌসুমে বেড়ে ডলার পর্যন্ত হয়। অন্যদিকে ভারতের রুটে খরচ পড়ত .১০.২০ ডলার, সঙ্গে বেনাপোল পর্যন্ত ট্রাক ভাড়ায় আরও ১৫২০ সেন্ট যুক্ত হতো।

বেবিচকের সদস্য (অপারেশনস অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমোডর আবু সাঈদ মেহবুব খান বলেন, ‘ইউরোপগামী পণ্যের স্ক্রিনিং চার্জ আট সেন্ট থেকে কমিয়ে ছয় সেন্ট করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বর্তমানে ঢাকা সিলেট বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ টন কার্গো পাঠানো হয়, যা পিক মৌসুমে এক হাজার ২০০ টন পর্যন্ত পৌঁছে যায়।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগিব সামাদ বলেন, ‘কার্গো ফ্লাইটগুলোকে কোনো বিধিনিষেধের আওতায় রাখা হয়নি। নভেম্বরডিসেম্বরের ব্যস্ত মৌসুমে নির্বিঘ্ন কার্যক্রম নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক মোহাম্মদ হাফিজ আহমেদ জানান, গত আগস্টে সেখান থেকে তিনটি কার্গো চালান পাঠানো হয়েছে।বর্তমানে ধারণক্ষমতা ১০০ টন, তবে চাহিদা বাড়লে তা বাড়ানো সম্ভব,’ বলেন তিনি।

যদিও বেবিচক কর্মকর্তারা এর আগে ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার তৃতীয় টার্মিনাল চালুর আশা জানিয়েছিলেন, এখন সেটি পিছিয়ে যেতে পারে। বেসামরিক বিমান চলাচল উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘জাপানি কনসোর্টিয়াম দায়িত্ব না নিলে সরকার বিকল্প আন্তর্জাতিক অপারেটরদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: