
বাংলাদেশে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়াদিল্লি তার পুরো কূটনৈতিক টিমকেই নতুনভাবে সাজাচ্ছে। ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনসহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা ও সিলেটের চারটি সহকারী হাই কমিশন—সবগুলোতেই একযোগে নতুন প্রধান আসছেন।
বর্তমান হাই কমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দায়িত্ব নেন। তার তিন বছরের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে, আর নতুন হাই কমিশনারের নাম ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করেছে ভারত। শিগগিরই সেই নাম বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
এর পাশাপাশি চারটি সহকারী হাই কমিশনের প্রধান—চট্টগ্রামের ড. রাজীব রঞ্জন, রাজশাহীর মনোজ কুমার, খুলনার শিবজী তিওয়ারি এবং সিলেটের চন্দ্র শেখর—এই চারজনকেও একসঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নতুন কর্মকর্তাদের নাম বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে, সম্মতি পেলেই তাঁরা দায়িত্ব নেবেন।
দিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। তাই নতুন কূটনৈতিক টিম নির্বাচনের আগেই দায়িত্ব নেবে—এটাই এখন অগ্রাধিকার।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার আমলে নিয়োগ পাওয়া মিশনপ্রধানদের একযোগে বদলে দেওয়া নিছক নিয়মিত পরিবর্তন নয়—এর মধ্যে স্পষ্ট কূটনৈতিক বার্তা আছে। গত বছর আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দুই দেশের সম্পর্কে যে শীতলতা এসেছে, তা কাটিয়ে নতুন বাস্তবতায় ভারতের অবস্থান পুনর্গঠনের ইঙ্গিত দিচ্ছে এই পদক্ষেপ।
একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘ভারত চাইছে নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাদের কূটনৈতিক উপস্থিতি পুনঃসংগঠিত করতে। নির্বাচনের আগে এই রদবদল কৌশলগতভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ।’
তবে দিল্লির সাউথ ব্লকের এক সূত্র জানায়, নতুন নিয়োগগুলোর জন্য বাংলাদেশের সম্মতি পেতে ‘যা ভাবা হয়েছিল তার চেয়ে কিছুটা বেশি সময় লাগছে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বর্তমান হাই কমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহর নিয়োগেও ভারত দীর্ঘ সময় নিয়েছিল। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে এই ধীরগতি কূটনৈতিক বাস্তবতারই প্রতিফলন।
সব মিলিয়ে—বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে নয়াদিল্লির এই নতুন কূটনৈতিক ‘মিশন’ শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক সংকেতও বটে।