বুধবার ১৫ অক্টোবর ২০২৫

২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারে এইচআরডব্লিউ উদ্বেগ

রানার প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ৯ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১৬:৫৯, ৯ অক্টোবর ২০২৫

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারে এইচআরডব্লিউ উদ্বেগ

বাংলাদেশে সদ্য সংশোধিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়কে অবিলম্বে এসব বেআইনি আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি জানাতে হবে এবং রাজনৈতিক সহিংসতার নামে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

২০২৪ সালের আগস্টে তিন সপ্তাহব্যাপী সহিংস আন্দোলনের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। সেই সহিংসতায় অন্তত এক হাজার ৪০০ জন নিহত হন। পরে ২০২৫ সালের ১২ মে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের কঠোর সংশোধনী ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ওই আইনেই এখন দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তর করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, ‘বাংলাদেশিরা শেখ হাসিনার অধীনে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ সহ্য করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার যেন সেই একই পথে না হাঁটে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়কে এখনই হস্তক্ষেপ করতে হবে, যাতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তর বন্ধ হয়।’

সংস্থাটি জানায়, এ পর্যন্ত হাজারো মানুষকে গ্রেপ্তর করা হয়েছে, অনেককে হত্যা মামলার আসামি বানানো হয়েছে, এবং আটক ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন—যা আগের সরকারের দমননীতিরই পুনরাবৃত্তি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ২৮ আগস্ট ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘মঞ্চ ৭১’ আয়োজিত এক আলোচনাসভা থেকে সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তর করে পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা প্রচারে কাজ করা প্ল্যাটফর্মটির সভায় হামলা চালানো উগ্রপন্থিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং অংশগ্রহণকারীদেরই আটক করা হয়। গ্রেপ্তরকৃতদের মধ্যে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান এবং সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।

পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। পুলিশ দাবি করে, তারা সরকারের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিচ্ছিলেন, কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীরা সেই দাবি অস্বীকার করেছেন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত সন্ত্রাসবিরোধী আইনটির ২০২৫ সালের সংশোধনী এখন রাজনৈতিক দমননীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে সংস্থাটি।

এ প্রসঙ্গে সম্পাদক পরিষদও সতর্ক করেছে, এই আইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের পরিসর সীমিত করবে। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘সরকার আইনের যথাযথ প্রয়োগই করছে।’

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫২ জন মব হামলায় নিহত হয়েছেন।

এদিকে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ সরকার গত জুলাইয়ে মানবাধিকার সহযোগিতার জন্য তিন বছরের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। তখন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের মানবাধিকার অঙ্গীকারের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে।’

গাঙ্গুলি বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইনকে রাজনৈতিক দমননীতির অস্ত্রে পরিণত করা উচিত নয়। সরকারের উচিত নিরাপদ, অংশগ্রহণমূলক ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।’

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: