শনিবার ২৬ জুলাই ২০২৫

১০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টাকার জন্য শরীরে ফুটন্ত ভাত ঢেলে দিলেন স্বামী

প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা 

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ২৪ জুলাই ২০২৫

টাকার জন্য শরীরে ফুটন্ত ভাত ঢেলে দিলেন স্বামী

ছোট ভাইয়ের জন্য নিজের শ্বশুরবাড়িতে দাবিকৃত অর্থ না দেওয়ায় সুলতানা পারভিন (২৫) নামের এক গৃহবধূকে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তারই স্বামী রবিউল বিশ্বাসের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে স্ত্রী সুলতানার শরীরে ফুটন্ত ভাত ঢেলে দিয়েছেন তিনি। তিন মাসের শিশুসন্তানকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের বিছানায় ছটফট করছেন সুলতানা পারভীন। চিকিৎসক বলছেন, শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ ঝলসে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

সুলতানা খাতুন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের কলোনীপাড়ার হাসান শেখের মেয়ে এবং কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমবাড়ীয়া ইউনিয়নের নগরবাকা গ্রামের রাজমিস্ত্রি রবিউল বিশ্বাসের স্ত্রী।
সুলতানা খাতুনের ভাই সোহেল বলেন, আমার বোনের স্বামীর ছোট ভাই মাসুদ সম্প্রতি বিদেশে যাবেন। এ জন্য বাপের বাড়ি থেকে নগদ দুই লাখ টাকা নিয়ে আনার জন্য আমার বোন সুলতানাকে চাপ প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে প্রায় তিন মাস যাবৎ টাকার জন্য শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করে আসছে স্বামী-শাশুড়ি। 

সোমবার (২১ জুলাই) সকালে এই ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে বোনের শরীরে ফুটন্ত ভাত ঢেলে দেন স্বামী, পাশেই ছিলেন শাশুড়ি। এতে ঘাড় থেকে পা পর্যন্ত ঝলসে যায়।

সোহেল বলেন, প্রতিবেশিদের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা দ্রুত বোনের শ্বশুর বাড়ি যায়। সেখানে আমাদের উপরে বোনের শ্বশুর বাড়ির লোকজন চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয়দের সহায়তায় বোনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়ার হালসার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করি। পরে অবনতি হলে বোনকে নিয়ে বুধবার (২৩) সকালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করি।

তিনি আরও বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তিন বছর আগে বোনকে বিবাহ দিয়েছি। এরপর আসবাবপত্র থেকে শুরু করে যৌতুকের টাকাও দিয়েছি। তারা আমার বোনকে নির্যাতন করতো দেখেই এসব দিয়েছি, তবুও মন গলেনি তাদের। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে গণমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বসেও কোনো লাভ হয়নি। মাস তিনেক আগে বোন দম্পতির কোলজুড়ে আসে মেয়ে সন্তান। এরপর থেকেই তার ছোটভাই বিদেশে যাবে বলে নগদ দুই লাখ টাকা দাবি করে বোনের স্বামী ও শাশুড়ি। শুরু হয় নির্যাতন। নিজ নামে এনজিও থেকে টাকাও তুলে দিতে বলে। সম্মতি না দেওয়ায় আবারও মারধর করে তাকে। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই। দ্রুত আমরা মামলা করব।

সরজমিনে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডে মেঝেতে চিকিৎসাধীন সুলতানা পারভীন। তার শয্যার পাশে মা, বড় বোন ভাই সোহেলকে দেখা যায়। যন্ত্রনায় ছটফট করছেন সুলতানা। পাশেই তিন মাসের মেয়ে তার নানির কোলে রয়েছে।

ভুক্তভোগী সুলতানা পারভীন  বলেন, দেবর বিদেশে যাবে এই জন্য আমার বাপের বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা আনতে বলে। আমার পরিবার খুবই দারিদ্র। টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার গায়ে ফুটন্ত ভাত পেছন থেকে ঢেলে দেন স্বামী ও শাশুড়ি। এর আগেও আমাকে বিভিন্ন সময় শারীরিক নির্যাতন করতো তারা।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জুনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা. এহসানুল হক তম্ময়  বলেন, শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ ঝলসে গেছে। শঙ্কামুক্ত কিনা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর বলা সম্ভব। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থানাা ওসি মোমিনুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের সংবাদ আমার জানা নেই। অভিযোগ বা মামলা হলে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
 

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: