
মুন্সীগঞ্জের মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার হওয়া সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহের শরীরের বাইরে ও ভেতরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী চিকিৎসক।
আজ শনিবার মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম শেষে পুলিশ স্বজনদের কাছে তার লাশটি হস্তান্তর করেছল। পরে ফ্রিজিং গাড়িতে করে মরদেহ নিয়ে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেছেন স্বজনরা।
এর আগে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পুলিশ ও স্বজনদের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
৭১ বছর বয়সী বিভুরঞ্জন সরকার দৈনিক আজকের পত্রিকায় জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়ে সেদিন রাতে রমনা থানায় জিডি করেছিল পরিবার।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার চর বলাকি এলাকার মেঘনা নদীতে তার মরদেহ ভাসছিল। পরে স্থানীয় লোকজন জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করে পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ পাঠানসহ পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে উদ্ধার করে সন্ধ্যার দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসে।
এর আগে কলাগাছিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা লাশের ছবি তুলে ঢাকার রমনা থানায় পাঠান। পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া বিভুরঞ্জন সরকারের ছবির সঙ্গে মরদেহের ছবির মিল পেয়ে পরিবারকে জানায় পুলিশ। খবর পেয়ে শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জে এসে মরদেহ শনাক্ত করেন বিভুরঞ্জন সরকারের ছেলে ঋতু সরকার ও ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার।
তবে মরদেহের শরীরের বাইরে ও ভেতরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী চিকিৎসক। বেলা ১১টার দিকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. শেখ মো. এহসান ময়নাতদন্ত শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষ হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে ডা. শেখ মো.এহসানুল ইসলাম সমকালকে বলেন, লাশটি পানি থেকে এসেছে। লাশ হালকা পচনশীল ছিল। আমরা যতদূর দেখি, শরীরের বাহিরে ও ভেতরে আঘাতের চিহ্ন পেলাম না। তার পরেও শরীর কিছু অংশ দাত, চুল, লিভার, কিডনি,পাকস্থলীর কিছু অংশ নিয়েছি। এগুলো ফ্রিজিং করে ঢাকায় পাঠাচ্ছি। প্রতিবেদন আসার পরে আমরা চূড়ান্ত মন্তব্য দিতে পারব।
এদিন বিভুরঞ্জন সরকারে মরদেহ গ্রহণ করেন তার ছোট ভাই চিররঞ্জন সরকার, আজকের পত্রিকার এডমিন কো-অর্ডিনেটর এস এম সেলিম, চিররঞ্জন সরকারের বন্ধু তাহমিদুজ্জামান, আজমা হাই ও মনন মোর্শেদ।
চিররঞ্জন সরকার সমকালকে বলেন, আমরা ভাইয়ের লাশ বুঝে পেয়েছি। এখন রাজধানীর সিদ্ধেশরী বাড়িতে নিয়ে যাবো, সেখানে পরিবারের সদস্যরা শেষবার দেখার পর তাঁর শেষকৃত্যের জন্য রাজধানীর সবুজবাগের বরদেশ্বরী কালিমন্দির ও শসান নেওয়া হবে।
মামলার বিষয়ে চিররঞ্জন সরকার বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে এখনো কিছু ভাবিনি। আমরা লাশের শেষ ক্রিয়া সমাপ্ত করে পরিবারের সদস্যরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।