
ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে যশোরের অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। তলিয়ে গেছে শতশত ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে মৎস্যঘের, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি ও ধানক্ষেত। নেট-পাটা-কারেন্ট জাল ও কচুরিপানায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানিপ্রবাহ। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অভয়নগরে ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইসগেটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৮টি পানির পাম্প পানি নিষ্কাশনের কাজ করছে। তবে শ্রীহরি ও টেকা নদী, আমডাঙ্গাসহ ছোট-বড় সব সরকারি খালে অবৈধভাবে নেট-পাটা-কারেন্ট জাল বসিয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। যে কারণে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
উপজেলার পায়রা, চলিশিয়া, সুন্দলী ও প্রেমমবাগ ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪, ৫ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২০ গ্রামে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব নদী ও খালে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা আটকে থাকতে দেখা যায়। অনেক মৎস্যঘের মালিক তার ভেসে যাওয়া মাছ আটকাতে ঘেরপাড়ে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের নবনিতা রানী বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের এই ভবদহের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধন হবে কি? সরকার আসে, সরকার যায় অথচ ভবদহের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয় না।’
উপজেলার কোটা গ্রামের মৎস্যঘের মালিক কামরুল দরফদার বলেন, ‘৩০০ বিঘা জমির দুইটি মৎস্যঘের ভেসে গেছে। অর্ধকোটি টাকার মাছ ছাড়া হয়েছিল। এলাকায় অসংখ্য মৎস্যঘের ভেসে যেতে শুরু করেছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান, টানা বৃষ্টিতে উপজেলার ২৮৫ হেক্টর আবাদি জমি জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। যার মধ্যে ২৫ হেক্টর আউশ ও ৪৫ হেক্টর আমন ধান, ৫৮ হেক্টর সবজি ও ১ হেক্টর জমির মরিচ রয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা না হলে উপজেলাব্যাপী ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় কৃষি ও কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টির ফলে উপজেলার পায়রা, চলিশিয়া, শ্রীধরপুর, সিদ্ধিপাশা ও প্রেমবাগ ইউনিয়নে ২৮৪টি মাছের ঘের (২২৫ হেক্টর) ভেসে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানাতে পারেননি তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি টানা বৃষ্টিতে ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জলাবদ্ধতার বিষয় জানানো হয়েছে। নির্দেশনা পেলে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতিম শীল বলেন, ‘নতুন যোগদান করেছি। ভবদহের জলাবদ্ধ এলাকায় পানিবন্দি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অবৈধ নেট-পাটা-কারেন্ট জাল ও কচুরিপানা অপসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। যারা নদী, খাল ও বিলে অবৈধভাবে নেট-পাটা ও জাল বসিয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। খাল সংস্কারে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।’ এ বিষয়ে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর পলাশ কুমার ব্যানার্জীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর পানিবন্দি এলাকা ও ঘরবাড়ির সংখ্যা অনেক কম। পাম্প দিয়ে দ্রুত পানি সরিয়ে দেয়া হয়েছে।’