
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে মাগুরার শালিখায় অর্ধশতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে মাছের পোনা ভেসে গেছে। পানির নিচে তলিয়ে আছে সদ্য রোপণ করা আমন ধানের চারা।
দীর্ঘদিন নদী খনন না করায় নদীতে পলি জমে নদীর নাব্যতা কমে গেছে। ফলে নদীর পানি বিলগুলোতে নামতে শুরু করা এবং অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, কয়েকদিনের বৃষ্টিপাতে শালিখা উপজেলার ২৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে খনন করা ৪৬টি দীঘি ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে ১১.৫০ মেট্রিক টন মাছের পোনা পানিতে ভেসে গেছে। ফলে ৬৪ লাখ ২৮ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার ধনেশ্বরগাতী, তালখড়ি, শতখালিসহ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে সেখানে থাকা রুই, কাতলা, শিং, কার্প, জাপানি পুটি, মৃগেলসহ অসংখ্য দেশি-বিদেশি মাছ। চায়না জাল দিয়ে ভেসে যাওয়া মাছ ঠেকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন মৎস্য চাষিরা। বিশেষ করে বিলগুলোতে থাকা মাছের ঘের ও দীঘিগুলোর ক্ষতি বেশি হয়েছে।
শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী গ্রামের অনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আমার এক একর জমির একটি মাছের ঘের ভেসে গেছে। সেখানে থাকা কার্প, মৃগেল, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন প্রকারের মাছও ভেসে গেছে। এতে করে আমার পাঁচ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।’
শতখালী ইউনিয়নের আড়ুয়াকান্দি গ্রামের মৎস্যচাষি আব্দুল করিম জানান, তার তিনটি পুকুরে রুই, কাতলা, জাপানি পুটি, মিরর কার্পসহ বিভিন্ন জাতের মাছ ছিল। অতিবৃষ্টিতে ঘেরের পাড় ডুবে সব মাছ ভেসে গেছে। এতে করে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
তালখড়ি ইউনিয়নের তালখড়ি গ্রামের প্রদীপ সরকার বলেন, ‘আমার দুইটি মাছের ঘের সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে এবং সেখানে থাকা বিভিন্ন প্রকার দেশি-বিদেশি মাছ ভেসে গেছে। প্রথমদিকে ঘেরের চারপাশে চায়না জাল দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। পরে পানি বেড়ে যাওয়ায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিনের টানা টানা বৃষ্টির ফলে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক জলাবদ্ধতা। অনেক পুকুরের পাড় ডুবে খাল-নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে গেছে। ফলে চিহ্ন হারিয়ে ফেলেছে মাছচাষের ঘের। এছাড়াও শালিখা উপজেলার চিত্রা ও ফটকি নদীর নদীতে পলি জমার কারণে নদীর পানি বিলে নামতে শুরু করেছে, ফলে বিলের পানি দিন দিন বাড়ছে।
এভাবে দিনের পর দিন পানি বৃদ্ধি পেতে থাকলে শুধু মাছের ঘের না, আমন ও আউশ ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতনমহল। পাশাপাশি দ্রুত পানি অপসারণপূর্বক মাছের ঘের রক্ষা এবং আমন ধান বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় বৃষ্টিপাত কয়েকগুণ বেশি হয়েছে। ফলে বিল ও নদীর পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে উপজেলার মোট ২৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমির ৪৬টি পুকুর ও দীঘি পানিতে তলিয়ে গেছে এবং সেখানে থাকা মাছগুলো ভেসে গিয়ে ৬৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।