গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় সোহেল রানার জীবনাকাশে নেমে আসে কালোমেঘের ছায়া। অর্থনৈতিক সংকটের মুখে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাড়িতে বেকার বসে থাকায় অবস্থায় শখের বশে শুরু করেন মুরগি পালন। আর সেই মুরগি পালনে মেঘের কোলে রোদ হেসেছে তার জীবনকাব্যে।
মায়ের দেওয়া মাত্র চারটি মুরগি দিয়ে যাত্রা শুরু করা সেই খামারটিতে মুরগির সংখ্যা এখন কয়েকশ ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি খামারে আছে নানান জাতের কবুতরও। আর এই মুরগি ও কবুতর পালন থেকে সোহেল প্রতি মাসে অর্ধ-লক্ষ টাকার কাছাকাছি আয় করছেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার বাড়ীয়ালীর এই উদ্যমী যুবক।
সোহেলের বাড়ির উঠোন জুড়ে চড়ে বেরানো রং-বেরঙের শত শত এসব মুরগির কোনো কোনোটির মাথা সিংহের কেশর ও কদম ফুলের মতো। কিছু কিছু মুরগির পালক যেন স্বর্ণখঁচিত। বাড়িটিতে মিশরিও, ফাউমি, আমেরিকান ব্রাফ ব্রাহমা, কলম্বিয়ান লাইট ব্রাহামা, গোল্ডোন সেব্রাইট ও টাইগার মুরগি ছাড়াও রয়েছে দেশি জাতের মুরগি। আর এসব মুরগির পরিচর্যা ও ডিম বাজারজাত নিয়ে চলে দিনভর কর্মযজ্ঞ।
মুরগি পালনের মাধ্যমে অর্জিত এই সাফল্য সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। একসময় যার কোনো আয় ছিল না- সেই তিনিই এখন প্রতিদিন ডিম, মুরগি, মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে দুই হাতে অর্থ উপার্জন করছেন। সোহেল জানান, প্রতি মাসে ডিম ও মুরগি বিক্রি করে খরচ খরচা বাদ দিয়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি আরও জানান, তার নিজ এলাকার ছাড়াও অন্য অনেক এলাকার খামারিরা তার কাছ থেকে উন্নত জাতের মিশরীয় ফাহমি মুরগির বাচ্চা নিয়ে পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
সোহেল জানান, মায়ের পরামর্শে ২০১৯ সালে বগুড়া থেকে ১৫০টি উন্নত জাতের মিসরীয় ফাহমি মুরগির বাচ্চা নিয়ে পালন শুরু করেন। মা এই কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন। বর্তমানে তার খামারে মুরগি রয়েছে ৩০০টির ওপর। প্রতিদিন ডিম উৎপাদন হয় ১৫০টি। ফাউমি মুরগি থেকে উৎপাদিত বড়ো ও ছোট সাইজের ডিমগুলো বিক্রির পর, মাঝারি সাইজের ডিমগুলো ইনকিউবেটর মেশিনের মাধ্যমে ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করেন। এই কাজে তার মা আনোয়ারা বেগম সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন।
উদ্যোক্তা সোহেল রানা বলেন, শখের বশে মুরগি পালন থেকে খামারি হয়ে ওঠা আমার। গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম আমি। অর্থনৈতিক কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাড়িতে এসে বেকার বসেছিলাম। মা তখন চারটি মুরগি দেন আমকে। আর সেখান থেকে আমার এই মুরগির খামারের যাত্রা শুরু। স্থানীয়ভাবে ছাড়াও অনলাইন বিভিন্ন প্ল্যাটর্ফম ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুরগি সরবরাহ করি।
তিনি আরও বলেন, ফামি মুরগির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। তেমন কোনো রোগবালাই হয় না। ভ্যাকসিনের তেমন প্রয়োজন হয় না। মুরগিগুলোকে তিনবেলা খাবার পরিবেশন করা হয়। দানাদার খাবারের পাশাপাশি দেওয়া হয় প্রাকৃতিক খাবার। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে তার খামারের মুরগির সংখ্যা। তিনি বলেন, ডিম থেকে ফোটানো বাচ্চা প্রত্যেক পিস বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, চৌগাছা উপজেলার বাড়ীয়ালী গ্রামের সফল খামারি সোহেল রানা পড়ালেখার পাশাপাশি দেশীয় ফাউমী মুরগি সহ বিভিন্ন মুরগী পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। বেকার যুবকেরা তারা চাকরির পেছনে না ছোটেন সোহেল রানার মত খামার গড়ে তুলে স্বাবলম্বী হতে পারেন।


























