
কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নতুন শর্তারোপ করায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে মাছ আমদানি বন্ধের পথে। নির্ধারিত শুল্কের চেয়ে বেশি অর্থ আদায় করায় মাছ আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। এতে প্রতিদিন সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় বন্ধ হয়ে গেছে।
রোববার সন্ধ্যায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দুটি মাছবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৭টি মাছবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। শনিবার এ বন্দর দিয়ে কোনও মাছ আমদানি হয়নি।
স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে ১০-১৫ ট্রাক মাছ আমদানি হয়ে থাকে। সেখানে গত তিন দিনে মাত্র ৯ ট্রাক মাছ আমদানি হয়েছে। সরকারের প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মতো রাজস্ব আসে মাছ আমদানি থেকে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সামুদ্রিক মাছে কেজিপ্রতি শুল্ক নির্ধারণ করেছে ৫০ সেন্ট মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩৮ টাকা। কিন্তু বেনাপোল কাস্টমস হাউজ কেজিপ্রতি ৭৫ সেন্ট শুল্ক আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রতি কেজিতে অতিরিক্ত ২৫ সেন্ট বা প্রায় ২০ টাকা বেশি অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে আমদানিকারকদের, যা প্রতি চালানে কয়েক লাখ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে তাদের।
তবে রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারণ করা মিঠাপানির মাছে কেজিপ্রতি ১.৫০ সেন্ট বা ৮৮ টাকা শুল্ক বহাল রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ট্রাকে ৮০ শতাংশ মিঠাপানির মাছ এবং ২০ শতাংশ সামুদ্রিক মাছ থাকতে হবে বলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নতুন শর্ত দিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, এই শর্তে ভারত থেকে মাছ আমদানি করলে লোকসানের মুখে পড়তে হবে আমদানিকারকদের।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মাছ আমদানির খাত থেকে সরকারের প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর থেকে প্রায় দেড় থেকে ২ কোটি টাকা রাজস্ব আসে। আগে গ্রোস ওজন ১৩৫ কেজি থেকে বরফ এবং কার্টনের ওজন বাদ দিয়ে নিট ওজন ৬৬ কেজিতে শুল্কায়ন করা হতো। বর্তমানে গ্রোস ওজন ১০০ কেজি থেকে নিট ওজন ৫৫ কেজি হিসেবে শুল্ককর পরিশোধ করতে হচ্ছে। সে হিসেবে আমদানিকারকে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কাস্টমসের সঙ্গে কথা বলা হলেও কোনও প্রতিকার হয়নি। এতে আমদানি খরচ বাড়ায় বাধ্য হয়ে মাছ আমদানি বন্ধ রাখা ছাড়া উপায় নেই।
এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মীর্জা রাফেজা সুলতানা গণমাধ্যমকে জানান, ‘মাছ আমদানিতে বাধা নেই, মিঠাপানির মাছ ৮০ শতাংশ ও সামুদ্রিক মাছ ২০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আমদানি করতে হবে এই তথ্যটি সঠিক নয়। মাছ ব্যবসায়ীরা মিঠাপানির মাছ ও সামুদ্রিক মাছ আমদানিতে যে ঘোষণা দেন, তার সঙ্গে আমদানি করা পণ্যের কোনও মিল থাকে না। যার ফলে গত সপ্তাহে আমদানিকৃত মাছের বেশ কয়েকটি চালানে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ায় জরিমানা করা হয়েছিল। মাঝে শুধু শনিবার ভারত থেকে মাছ আমদানি হয়নি। রোবার দুই ট্রাক আমদানি হয়েছে। মাছ আমদানি স্বাভাবিক আছে। বৈধভাবে মাছ আমদানিতে বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।