বুধবার ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ’দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনকে’ সতর্কপত্র

প্রতিনিধি, অভয়নগর (যশোর) 

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ’দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনকে’ সতর্কপত্র

চলছে বোরো আবাদের ভরা মৌসুম। তবে প্রতিবারের মতো চলতি মৌসুমেও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) ডিলারদের নির্ধারিত সময়ে সার সরবরাহ করছেন না বেসরকারি সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন।

বিসিআইসি ডিলারদের অনুকূলে বরাদ্দের সার সরবরাহে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি বহুল আলোচিত সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির নওয়াপাড়া কার্যালয়ে সতর্কতামূলক চিঠি প্রেরণ করেছে কৃষি বিভাগ।

‘দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের' কর্মকর্তা আমিনুর রশিদ খানকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে ফসল উৎপাদনের ভরা মৌসুম চলছে। বরাদ্দ অনুযায়ী ডিলার তথা কৃষকের কাছে পর্যাপ্ত সার সময়মতো পৌঁছানো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। যথাসময়ে বরাদ্দকৃত সার বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ জমা প্রদান বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অত্যন্ত তৎপর। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিভিন্ন জেলার সার উত্তোলনের হার আশানুরূপ নয়। এ বিষয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ডিলার আপনার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সার সরবরাহে দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ এনেছেন। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় চলতি মাসে আপনার আওতাধীন সংশ্লিষ্ট ডিলারদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত সার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও ত্বরান্বিত করতে অনুরোধ করা হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন’ নামক ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় ‘বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ ও ‘বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে আরও দুইটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব প্রতিষ্ঠানই সরকারের বেসরকারি পর্যায়ের সার আমাদানি কাজে যুক্ত। তবে অধিকাংশ মৌসুমে তারা ডিলারদের অনুকূলে বরাদ্দের সার সরবরাহে নানা ধরণের কৃত্তিম জটিলতা সৃষ্টি করে। এতে সরাসরি প্রভাব পড়ে কৃষকের চাষাবাদের উপর। এমনকি, সরবরাহ জটিলতায় প্রান্তিক পর্যায়ে সারের কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন নৌঘাটে কালোবাজারির মাধ্যমে উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয় বলেও অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ‘বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ ও ‘বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের' অনুকূলে চলতি মাসে টিএসপি বরাদ্দ রয়েছে ২২ হাজার ৪০০ মে. টন, ডিএপি রয়েছে ২৬ হাজার ৪৫২ মে. টন এবং এমওপি রয়েছে ২৩ হাজার ৬০০ মে. টন। এরমধ্যে চলতি মাসে সংশ্লিষ্ট বিসিআইসি ডিলারদের কাছে টিএসপি ১৩ হাজার ৩৬৮ দশমিক ১০ মে. টন, ডিএপি ১৭ হাজার ৯২৬ দশমিক ৬০ মে. টন ও এমওপি ১৪ হাজার ৫২৩ দশমিক ০৫ মে. টন  সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত সার সরবরাহ করতে বাকি রয়েছে টিএসপি ৯ হাজার ৩১ দশমিক ৯০ মে. টন, ডিএপি ৮ হাজার ৫২৫ দশমিক ৪০ মে. টন ও এমওপি ৯ হাজার ৭৬ দশমিক ৯৫ মে. টন।
সূত্রমতে, প্রতিবছর ১৬ অক্টোবর থেকে বোরো মৌসুম শুরু হয় এবং তা চলে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। সে হিসেবে সারা দেশে এখন বোরো ধানের ভরা মৌসুম চলছে। বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে দেশের কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যে সারের ভয়াবহ কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় চলতি মাসে সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন যথাসময়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিসিআইসি ডিলারদের কাছে সার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। 
কোন কোন এলাকায় কৃষক একাধিকবার ডিলারের কাছে গিয়েও সার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার কোন কোন এলাকার কৃষক খোলা বাজার থেকে উচ্চমূল্যে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। বোরো ও রবি শস্যের জন্য সময়মতো সার প্রয়োগ না হলে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এতে হুমকিতে পড়েছে বোরো চাষাবাদ।

যশোরের শিল্পনগরী নওয়াপাড়ার বিসিআইসি সার ডিলার 'মেসার্স হক ট্রেডার্সের' পরিচালক আব্দুল আওয়াল খান বলেন, ‘আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দেশ ট্রেডিং সার ডেলিভারি দিতে দেরি করে না। তবে পদ্ধতিগত কারণে সার ডেলিভারি দিতে কিছুটা সময় দেরি হয়’।

সার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান 'দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের' নির্বাহী কর্মকর্তা মজিবুর রশিদ খান বলেন, ‘কেউ কেউ আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে পারে যে দেরি হচ্ছে। আমার প্রতিষ্ঠান থেকে দেশের ৪০ থেকে ৪৫ জেলার বরাদ্দ একসাথে দেয়। লোকজন বেশি দেখা যায় এইজন্য দীর্ঘসূত্রতার কথা বলেছে। প্রতিদিন চারশ’ থেকে পাঁচশ’ ট্রাক সার ডেলিভারি হয়। এ পর্যন্ত বরাদ্দের ৭০ ভাগ মাল ডেলিভারি হয়েছে। আমার এখানে যে পরিমাণ বরাদ্দ দিছে আমি ডেলিভারি দিতে দেরি করছি না। আমি সঠিকভাবেই ডেলিভারি দিচ্ছি।’

যশোরের অভয়নগর উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন বলেন, ‘এখন রবি মৌসুম ও সার ব্যবহারের ভরা মৌসুম। এই ভরা মৌসুমে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন সময়মতো ডিলারদের হাতে সার দিচ্ছে না। এতে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তাদেরকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং অভয়নগর সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন দিপু বলেন, ‘আমি খবর পেয়ে দেশ ট্রেডিংয়ের অফিসে গিয়েছিলাম। আশু সমস্যা সমাধানে তাদের নির্দেশনা দিয়ে এসেছি। তারা দ্রুত সমস্যার সমাধান করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: