
দেড় দশক ধরে উচ্চ আদালতে আটকে আছে দৈনিক রানার সম্পাদক আর এম সাইফুল আলম মুকুল হত্যা মামলার কার্যক্রম। ফলে আইনের ঘেরাটোপে ঘাতকেরা আজ রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। আইনজীবীরা বলছেন, যে রিটের কারণে উচ্চ আদালতে মামলাটি আটকে আছে। রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব নয়।
আর এভাবে বছর ঘুরে আবারো ফিরে এসেছে সেই ৩০ আগস্ট। আজ দৈনিক রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুলের ২৭তম হত্যাবার্ষিকী। ২৭ বছর আগে- ১৯৯৮ সালের আজকের এই দিনে ঘাতকের বোমায় জীবনপ্রদীপ নিভে যায় অদম্য ও অকুতোভয় প্রতিবাদী সাংবাদিক সাইফুল আলম মুকুলের।
রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুলের হত্যাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে যশোরে আজ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে প্রেসক্লাব যশোর, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়ন ও সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোর। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শোকর্যালি, শহিদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল।
গত ১৫ বছর ধরে মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টে আটকে থাকায় চিহ্নিত হয়নি সাহসী সাংবাদিক মুকুলের ঘাতকেরা। ফলে কোনো বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ সাইফুল আলম মুকুলের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ।
এ বিষয়ে যশোর আদালতের পাবলিক প্রসিউটিকর সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, মুকুল হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে ছিল। কিন্তু হাইকোর্টে এক আসামির আবেদনের কারণে মামলাটির আর্গুমেন্ট শুরু করা সম্ভব হয়নি। হাইকোর্টে আবেদনের নিষ্পত্তির পর সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার বিচারকাজ শুরু হবে।
১৯৯৮ সালের এদিন সন্ধ্যায় যশোর শহর থেকে বেজপাড়ার নিজ বাসভবনে যাওয়ার পথে চারখাম্বার মোড়ে সন্ত্রাসীদের গুলি ও বোমা হামলায় নিহত হন আর এম সাইফুল আলম মুকুল। হত্যাকাণ্ডের পরদিন নিহতের স্ত্রী হাফিজা আক্তার শিরিন যশোর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দৈনিক রানারের প্রতিষ্ঠালগ্ন ১৯৭৮ সাল থেকেই সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা অনাচার-অবিচার, শোষণ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা দৈনিক রানার। সন্ত্রাসী, গডফাদার ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংবাদ ও কলাম লেখার কারণে পত্রিকাটি সবসময় শাসকগোষ্ঠী, সন্ত্রাসী ও মাফিয়াদের রোষানল ও আক্রোশের শিকার হয়েছে।
সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকাণ্ড ছাড়াও আশির দশকে জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসন চলাকালে কারাগারে অপরিসীম জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে জুলুম-নির্যাতনের হন রানারের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক গোলাম মাজেদ। বাবার অবর্তমানে সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে বড় ছেলে সাইফুল আলম মুকুলের হাত ধরে নব্বইয়ের দশকেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে দৈনিক রানার পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছানোর পাশাপাশি সন্ত্রাসী-দুর্নীতিবাজদের কাছে আতঙ্ক হিসেবে পরিচিতি পায়।