সোমবার ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অতিবৃষ্টিতে ভবদহে জলাবদ্ধতা

ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের-বসতবাড়ি, মৎস্য খাতে বিশাল ক্ষতি 

হৃদয় মল্লিক, (অভয়নগর) 

প্রকাশিত: ১৬:৪২, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৬:৪৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভেসে গেছে শত শত মাছের ঘের-বসতবাড়ি, মৎস্য খাতে বিশাল ক্ষতি 

যশোর অঞ্চলের দুঃখ ‘ভবদহ’ আবারও পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা বর্ষণে  কারণে অভয়নগর উপজেলার ভবদহ নিম্নাঞ্চলের অন্তত ৫০টি গ্রামে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। প্রবল পানির চাপে ভেঙে পড়েছে মাছের ঘেরের ভেড়ি। ভেসে গেছে লাখ লাখ টাকার মাছ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

যশোর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত জুনে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৯৯ মিলিমিটার। আর জুলাইয়ের ২৭ তারিখ পর্যন্ত রেকর্ড হয়েছে ৫১৪ মিলিমিটার বৃষ্টি। এতে ভবদহের ৫২টি বিল প্লাবিত হয়ে পানি উপচে পড়েছে গ্রামাঞ্চলে।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে ভবদহ অঞ্চলের ১২৯ হেক্টর আবাদি জমি তলিয়ে গেছে। পাশাপাশি পায়রা, চলিশিয়া, শ্রীধরপুর, সিদ্ধিপাশা ও প্রেমবাগ ইউনিয়নে ২৮৪টি মাছের ঘের (২২৫ হেক্টর) ভেসে গেছে।

স্থানীয় সুন্দলী গ্রামের কৃপাচার্য ধর বলেন, হঠাৎ পানির চাপে আমার ঘেরের পাড় ধসে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে সব মাছ বের হয়ে গেছে। পায়রা গ্রামের মোস্তফা কামাল জানান, টানা বৃষ্টিতে আমাদের সব ঘের পানিতে ডুবে গেছে। লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক গ্রামে ঘরের ভেতর পানি উঠেছে। স্কুল মাঠে হাঁটুসমান পানি জমে পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে একাধিক প্রতিষ্ঠানে। ধর্মীয় উপাসনালয়েও পানি প্রবেশ করেছে। অভয়নগর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল হক বলেন, অতিবৃষ্টিতে ২৮৪টি মাছের ঘের ভেসে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও জানা যায়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, নির্দেশনা পেলে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, আমডাঙ্গা খালের কাজ দ্রুত শুরু না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। পাশাপাশি সুইচগেট সবগুলো খুলে দিলে পানি দ্রুত নামতে পারত।
সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালি অভিযোগ করেন, ২১ ভেন্টের মধ্যে মাত্র ছয়টি গেট খোলা হয়েছে। সব গেট খুলে দিলে আরও বেশি পানি নামত। টিআরএম চালু না করলে ভবদহ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে না।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম শীল বলেন, ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতি চলছে। একইসাথে খাল ও বিলে অবৈধভাবে নেট-পাটা ফেলে পানিপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ ব্যানার্জী জানান, শিগগিরই ভবদহ অঞ্চলের ছয়টি নদী প্রায় ৮১ কিলোমিটার খননের কাজ শুরু হবে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা দুই-এক মাসের মধ্যে শুরু হবে।
 

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: