শুক্রবার ২৮ নভেম্বর ২০২৫

১২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইতিহাসের নীরব সাক্ষী সতীঘাটা সেতু

সাজেদ রহমান

প্রকাশিত: ১৫:১৮, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

ইতিহাসের নীরব সাক্ষী সতীঘাটা সেতু

ব্রিটিশ আমলে যশোরে মুক্তেশ্বরী নদীর উপর নির্মিত সতীঘাটা সেতু । একদা সার্বক্ষনিক ব্যস্ত থাকা সেতুটি আজ অপেক্ষায় থাকে জনমানুষের। ছবি: সৈকত ভদ্র

যশোর-কেশবপুর সড়কের সদরের সতীঘাটায় মুক্তেশ্বরী নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন সেতুটি যেন এক নীরব ইতিহাসের সাক্ষী। ব্রিটিশ আমলে নির্মিত এই সেতু একসময় ছিল যাতায়াতের প্রধান ভরসা। নদীর দুই তীরকে যুক্ত করা সেতুটির উপর দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের পদচারণা, গরুর গাড়ি, সাইকেল আর পরে মোটরযানের চলাচলে মুখর থাকত সতীঘাটা। সময় পালটেছে, বদলে গেছে সেতুর গুরুত্বও। প্রায় দুই যুগ আগে এর ঠিক উত্তরে নির্মিত হয়েছে নতুন একটি সেতু, যেখানে এখন সমস্ত ভারী যানবাহনের চলাচল।

তবুও পুরোনো সেতুটি হারিয়ে যায়নি। আজও এটি চালু আছে- তবে আগের মতো ব্যস্ত নয়। বড়ো বড়ো কংক্রিটের বিমের উপর দাঁড়িয়ে থাকা সেতুটি এখন যেন এক ক্লান্ত বৃদ্ধের মতো নিঃশব্দে দিনের পর দিন পার করছে। বিমগুলোর ফাঁকে জন্মেছে ঝোপ-ঝাড় আর আগাছা। প্রকৃতি যেন সেতুটিকে ধীরে ধীরে আপন করে নিচ্ছে। বিশেষ করে বট, অশ্বত্থ আর লতাগুল্মের দখলে চলে গেছে জায়গাটির অনেক অংশ। সেতুর গা বেয়ে নেমে আসা তাদের শেকড় যেন ইতিহাসের শরীরে আঁচড় কেটে যাচ্ছে।

এই সেতুর নিচ দিয়ে কত জল গড়িয়েছে, কত প্রজন্মের পায়ের শব্দ উঠেছে-নেমেছে, তার হিসাব রাখে কে? মানুষের ব্যবহার কমলেও সময়ের ছাপ পড়েছে সেতুর প্রতিটি ইটে-সিমেন্টে। নদীর স্রোত, বর্ষার ঢল, রোদ-বৃষ্টি মিলে সেতুটিকে ক্ষয় করেছে, কিন্তু ভেঙে দিতে পারেনি এর দৃঢ়তা। তবুও অবহেলা আর অযত্নের কারণে সেতুটি ক্রমেই জীর্ণ হয়ে আসছে। চারপাশে তাকালে এমন অনুভূতি হয়, যেন একদিন অচিরেই ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাবে এটি- ‘নির্মাণ ছিল, ধ্বংসও হলো’।

মানুষের ব্যবহার কমলেও সেতুটির প্রতি সময়ের নিষ্ঠুর আচরণ চোখে পড়ে। এখনো কিছু পথচারী, সাইকেল আর মোটরসাইকেলের চালক সেতুটি দিয়ে পার হন। সেতুর কাঠামোতে জমে থাকা আগাছা আর গাছপালা দেখে অনেকেই বিস্মিত হন- কীভাবে এতদিন টিকে আছে এই পুরোনো স্থাপনা? কিন্তু স্থাপত্যের শক্তির চেয়েও বড়ো কথা হলো, এটি একটি স্থানের ইতিহাস এবং মানুষের স্মৃতির অংশ। তাই অযত্নে থাকলেও সেতুটি বুকে ধারণ করে আছে বহু গল্প।

হয়ত একদিন সত্যিই হারিয়ে যাবে এই সেতু- সময়, ক্ষয় আর মানুষের উদাসীনতার চাপে ভেঙে পড়বে কোনও এক বর্ষার রাতে। তবুও শেষ পর্যন্ত রয়ে যাবে তার ছবিটুকু, যা পত্রিকার পাতায় কিংবা মানুষের স্মৃতিতে বলে যাবে নীরব এক সেতুর গল্প। সেই গল্পে থাকবে যাতায়াতের দিনগুলি, থাকবে মানুষের ভরসা হয়ে ওঠার সময়কাল, আর থাকবে অবহেলায় হারিয়ে যাওয়ার দীর্ঘ বেদনার ইতিহাস।
 

শেয়ার করুনঃ

জনপ্রিয়

শীর্ষ সংবাদ: