
মাইনুল আহসান নোবেল। ছবি : সংগৃহীত
ধর্ষণ মামলার পর ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী ইসরাত জাহান প্রিয়াকে কারাগারে বিয়ে করেছেন গায়ক মাইনুল আহসান নোবেল। এরপর স্বামীকে মামলা থেকে ছাড়াতে আদালতে হাজির হন স্ত্রী। এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে স্ত্রী প্রিয়াকে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেটে লেখা লাভ লেটার দেন নোবেল। এতে লেখা ছিল- ‘তুমি আমার প্রাণের প্রিয়া। তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ’।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) বেলা ১২টা ২৩ মিনিটের দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুবের আদালতে হাজির করা হয় নোবেলকে। এরপর বিচারক এজলাসে না থাকা অবস্থায় কাঠগড়ায় স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে থাকেন নোবেল। কখনো হাত ধরে, কখনো কানে কানে ফিস ফিস করে হেসে হেসে কথা বলতে থাকেন দুজনে। এ সময় নোবেলের গায়ে সাদা পাঞ্জাবি পরা ছিল।
এরপর ১২ টা ৩৮ মিনিটের দিকে নোবেল তার স্ত্রী প্রিয়ার হাতে এক এক করে সাদা কাগজে লেখা ছোট ছোট ১৫-২০ টির মতো চিঠি দেন। চিঠিগুলো স্ত্রীকে দেখিয়ে তা জোরে জোরে পড়েও শোনান। অধিকাংশ চিঠিতে প্রেম নিবেদন লেখা ছিল। কিছু চিঠিতে বিভিন্ন জনের নাম ও নাম্বার লেখা ছিল। একেকটি চিঠি স্ত্রীর হাতে দেন নোবেল, তা দেখে হাসিতে আবেগে আপ্লুত হন স্ত্রী প্রিয়া। সর্বশেষ পকেট থেকে একটি সিগারেটের প্যাকেটের কাগজ বের করেন নোবেল। প্যাকেটের পেছনে সাদা অংশে লেখা নোবেল পড়ে শোনান, ‘তুমি আমার প্রাণের প্রিয়া, তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ।’ এটা দেখে হাসতে থাকেন তার স্ত্রী।
এ সময় এক আইনজীবী বলেন, কি লেখা চিরকুটে। একটা ছবি তুলি। তখন নোবেল তার স্ত্রীকে বলেন, ‘না, না, এগুলো কাউকে দেখিও না। শুধু তুমি দেখবে।’
এদিকে কিছুক্ষণ পর এজলাসে আসেন বিচারক। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন নোবেলের জামিন চান। তিনি আদালতে বলেন, আসামি নোবেলের সঙ্গে বাদীর বিয়ে হয়েছে। আসামি জামিন পেলে বাদীর কোনো আপত্তি নেই। তখন বিচারক বাদীর কাছে প্রশ্ন করেন, আসামি জামিন পেলে তার কোনো আপত্তি আছে কিনা। বাদী প্রিয়া বলেন, ‘না, আমার কোনো আপত্তি নেই।’ শুনানি শেষে একটু পর আদালত আসামি নোবেলকে ১ হাজার টাকা বন্ডে জামিন মঞ্জুর করেন। শুনানি শেষে আসামি নোবেল ও তার স্ত্রী হাসি মুখে একসঙ্গে হাতে হাত ধরে হাজতখানায় যান।
নোবেলের আইনজীবী মো. মনির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, নোবেল জামিন পাওয়ায় তার কারামুক্তিতে বাধা নেই। বাদীর সঙ্গে যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে পরবর্তীতে বাদীর অনুমতি সাপেক্ষে আমরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করব।
এর আগে গত ১৯ জুন কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নোবেল ও প্রিয়ার বিয়ে হয়। তারআগে গত ১৮ জুন তাদের কাবিনমূলে বিয়ের ব্যবস্থা করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেছিলেন ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান প্রিয়া। মামলা দায়েরের পরই নোবেলকে ডেমরা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিনই জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
এ দিকে মামলার অভিযোগে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুক্তভোগী ইডেন কলেজের ছাত্রী প্রিয়ার সঙ্গে নোবেলের পরিচয় হয়। এরপর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত বছরের ১২ নভেম্বর গায়ক নোবেল তার স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ভুক্তভোগীকে ডেমরা থানাধীন তার বাসায় নিয়ে যায় আসামি নোবল। এরপর কয়েকজন আসামির সহায়তায় ওই ছাত্রীকে আটকে রাখে।
এরপর ১২ নভেম্বর রাত ৮টার সময় ভুক্তভোগীকে আটক করে রাখে এবং তার মোবাইল নিয়ে নেয়। বাদী তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য আসামিকে মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার জন্য বললে নোবেল ওই ছাত্রীর ২৬ হাজার টাকার রেডমি ১০ প্রো মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলে।
এরপর আসামি নোবেল তার বসতঘরে আটক রেখে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও তার মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখে। নোবেলের কথামতো বাসায় না থাকলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেবে বলে জানায়। তাই বাদী আসামির ভয়ে কাউকে কোনো কিছু বলার সাহস পাননি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এরপর আসামি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে বাদীকে মারধর করত। আসামি তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনের সহায়তায় বাদীকে নির্যাতন করে একটি কক্ষে আটক করে রাখে।
ওই ঘটনার একটি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বাদীর বাবা-মা তাকে চিনতে পারে। এরপর তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টায় নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ভুক্তভোগী ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ডেমরা থানায় অপহরণের পর ধর্ষণের অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। যদিও পরে নোবেলের সঙ্গে মামলার বাদী প্রিয়ার প্রেম ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।