
যশোরের কেশবপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মোড়লকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে জনতা। পুলিশের হ্যান্টকাপ পরা অবস্থায় স্থানীয় জনতা তাকে বেধড়ক মারপিট করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে দ্রুত থানায় নিয়ে যায়।
থানা পুলিশ জানায়, বুধবার দুপুরে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারেন কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতি-নরেন্দ্রপুর গ্রামে রফিকুল ইসলামের বাড়ি প্রায় আড়াই ঘন্টা ঘিরে রেখেছে জনতা। এরপর সেখানে গিয়ে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানায়, বাড়ি ঘেরাও করে রাখার সময় রফিকুলের সন্ত্রাসী বাহিনীর ৮/১০ জন জনতার ওপর হামলা চালায়। এ সুযোগে রফিকুল বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর তার ভাগ্নে আওয়ামী লীগ নেতা মিলনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শতশত মানুষ জড়ো হয়ে রফিকুলকে আটকের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর রফিকুল এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। মঙ্গলবার রাতে আবারো বাড়িতে ফিরে আসেন।
জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলের সাধারণ এক কর্মী থেকে রাজনীতেতে তার হঠাৎ উত্থান হয়। ২০১৫ সালে তিনি প্রথবার নৌকা প্রতীকে পৌর মেয়র নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে সন্ত্রাসীদের দিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আব্দুস সামাদ বিশ্বাসকে পরাজিত করেন। পরবর্তীতে ২০২১ সালে পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হয়।
এছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ পান। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রফিকুল ইসলাম মোড়লেকে। রাজনীতিতে তার এরকম উত্থানের কারণে বেপরোয়া ওঠেন। ওই সময় তার ভাগ্নে টিটোর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ‘উপজেলা নিয়োগ ও টিআর, কাবিখা সিন্ডিকেট’। ওই সিন্ডিকেটটি কয়েকশত কোটি টাকা লেনদেন করেছে।
তার প্রতিবেশীরা জানান, এক সময়ের নুন আনতে পান্তা ফুরানো রফিকুল ইসলাম মোড়ল হঠাৎ করেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান। এরপর খোদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও গড়ে তোলেন নিজস্ব বলয়। দলীয় রাজনীতিতে তার মতের বাইরে কেউ গেলে তাদের শায়েস্তা করতে সন্ত্রাসী বাহিনী ও টর্চার সেল গঠন করেন। তার ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দিতো জামাল। যেটি উপজেলাব্যাপী জামাল বাহিনী নামে পরিচিত। ওই বাহিনীর উপজেলা জুড়ে ত্রাসের রাজত্ব ছিল।
কেশবপুর থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়লকে জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তার নামে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।