
দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ ও পুরোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান ঝিনাইদহের মোবারকগঞ্জ চিনিকল আর্থিক সংকটে রয়েছে। কলের গোডাউনে দুই হাজার ৮০০ মেট্রিক টন অবিক্রিত চিনি জমে আছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন এসব চিনি বিক্রি না হওয়ায় গত দুই মাস ধরে কলের ৩৫১ স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
চিনিকল সূত্রে জানা যায়, মোবারকগঞ্জ চিনিকলে বর্তমানে ৬৪৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক কর্মরত আছেন। এর মধ্যে মৌসুমি শ্রমিক রয়েছেন ২৯৬ এবং স্থায়ী ৩৫১ জন। মৌসুম ব্যতীত সময়ে কেবল স্থায়ী শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে প্রায় এক কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। আর কল চালু থাকলে অর্থাৎ মৌসুমে সব শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা মেটাতে প্রয়োজন হয় এক কোটি ৮০ লাখ টাকার। তবে কলের গোডাউনে বিপুল পরিমাণ চিনি পড়ে থাকলেও তা বিক্রি না হওয়ায় আর্থিক সংকট দেখা দেয়। চিনি বিক্রি না হওয়ায় আয় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
চিনি বিক্রি বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের ভোগান্তি এখন চরমে। কলের কর্মচারী আব্দার রহমান বলেন, ‘চিনি বিক্রি না হওয়ায় আমাদের বেতন-ভাতা বন্ধ আছে। গত এপ্রিল মাসের বেতন পেয়েছি মে মাসে। এরপর জুন মাসের বেতন এখনও বকেয়া, জুলাই শেষের পথে। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিনিকলের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চিনির ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ ও বাজারে চিনি সিন্ডিকেটের প্রভাব বন্ধ করে দ্রুত বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় এই চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যা হাজারো শ্রমিক পরিবারের জন্য হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আমরা বেকার হয়ে পড়বো।’
মোবারকগঞ্জ চিনিকলের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাজারে বর্তমানে খোলা চিনির কেজি ১১৫ টাকা। কিন্তু আমাদের উৎপাদিত চিনির দাম নির্ধারিত করা হয়েছে ১২৫ টাকা। প্যাকেট চিনির দাম ১৩০ টাকা। ফলে আমাদের ডিলাররা চিনি কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। মাসে একজন ডিলার ৫০০ কেজি করে চিনি নেওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ডিলারই তা নিচ্ছেন না।’
চিনি বাজারে সিন্ডিকেট কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি পাঁচ টাকা কমিয়ে চিনি বিক্রি শুরু করি, তাহলে ওই সিন্ডিকেট আরও ১০ টাকা কমিয়ে দেয় বাজারে। এভাবে প্রতিযোগিতার বাইরে চলে যাচ্ছে সরকারি চিনিকলগুলো। ফলে মিলে চিনির চাহিদা কমে গেছে, বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য আর্থিক সংকট দেখা দেওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন-ভাতা দিতে পারছি না আমরা।’