মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে মনোনয়ন দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে গাংনী উপজেলা শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে জানা গেছে-বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আমজাদ হোসেনের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন সমর্থক নেতাকর্মীরা। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।
এসময় গাংনী উপজেলা শহর কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। দোকান পাট বন্ধ করে পালিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। সেনাবাহিনী ও পুলিশের টিম হাসপাতাল বাজার এলাকায় নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করছিল।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দফায় দফায় চলে এই সংঘর্ষ। এসময় দুই পক্ষের মধ্যে হামলা পাল্টা হামলা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ারা ব্যবসায়ী ও পথচারীদের ২২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর, গাংনী সোবহান হোটেল, উপজেলা বিএনপি, দলীয় প্রার্থী ও মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীর কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে আহত হয়েছেন প্রায় দশজন। বর্তমানে গাংনী উপজেলা শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। শহরে কয়েক হাজার নেতাকর্মী রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-২ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আমজাদ হোসেনকে দ্বিতীয়বারের মত মনোনয়ন প্রদান করা হয়েছে। এতে বর্তমান জেলা সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন সমর্থক নেতাকর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়েন।
মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই সোমবার রাতে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উপজেলা শহরের বিক্ষোভ মিছিল, টায়ার জালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। এসময় তারা মনোনয়নকে অবৈধ, ভুয়া আখ্যায়িত করে নানাভাবে স্নোগান দিতে থাকেন। এক সময় সেনাবাহিনীর একটি টিম ঘটনাস্থলে যেয়ে রাস্তা ফাঁকা করে দেন।
আমজাদ হোসেন অভিযোগ করেন, ‘সোমবার মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই তারা (প্রতিপক্ষ) রাস্তায় নেমে উচ্ছৃঙ্খলতা শুরু করে। আজ (মঙ্গলবার) সকালের দিকে আমি কিছু নেতাকর্মী নিয়ে বড়বাজার মসজিদের কাছে পৌঁছানোমাত্রই জাভেদ মাসুদ মিল্টনের লোকজন আমার ওপর হামলা চালায়। ছুঁড়তে থাকে ইটপাথর।’
তিনি অভিযোগ করেন, জাভেদ মাসুদ মিল্টনের সমর্থকদের ইটপাটকেলের আঘাতে তিনি সমর্থকসহ একটি মার্কটে আশ্রয় নেন। পরে হামলাকারীরা তার কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালায়। দলীয় কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ছিড়ে ফেলে। ১১টি গাড়ি ভাঙচুর করে। একইসাথে কার্যালয়ের নিচে থাকা সামাদ হোটেলে ভাংচুর চালায়। হোটেলে খাবার খাওয়ার লোকজনের মোটরসাইকেলও ভাংচুর করে হামলাকারীরা।
মঙ্গলবার সকালে জাভেদ মাসুদ মিল্টনের সমর্থকরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। সমাবেশে গাংনী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলফাজ উদ্দিন কালু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আওয়াল, পৌর বিএনপির সভাপতি মকবুল হোসেন মেঘলা, সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলামসহ তাদের বিপুল পরিমাণ লোকজন উপস্থিত ছিলেন ।
পরে রাস্তা দিয়ে আমজাদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে রাস্তায় বের হলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা পাল্টা হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। জাবেদ মাসুদ মিল্টনের কাছে মোবাইল ফোনে বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে অফিসে বসে কথা বলবো’।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বানী ইসরাইল জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। শহরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’


























